বিইআরসি বাল্ক বিদ্যুতের শুল্কের রিভিউ আপিলের রায় সোমবার
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আগামীকাল সোমবার বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) পুনর্বিবেচনার আপিলের বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে।
আজ রোববার অফিসিয়াল বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। যদিও ভোক্তা অধিকারকর্মীরা আর কোনো মূল্য বৃদ্ধির বিপক্ষে।
গত ১৩ অক্টোবর নিয়ন্ত্রক কর্তৃক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিপিডিবি ১৪ নভেম্বর বিইআরসিতে রিভিউ আপিল করে।
বিইআরসি থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রস্তাবটি জমা দেওয়ার আগে বিপিডিবি সরকারের সর্বোচ্চ নীতিগত পর্যায় থেকে একটি অনুমোদন পেয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও রিভিউ আপিল করতে অনুমোদন দিয়েছেন।
বিইআরসি ১৩ অক্টোবর বিপিডিবির বাল্ক বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল, সংক্ষুব্ধ পক্ষ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নিয়ন্ত্রকের সিদ্ধান্ত পুনঃমূল্যায়নের জন্য আপিল প্রস্তাব জমা দিতে পারে। তবে, বিইআরসি এই বিষয়ে আর কোনো গণশুনানি ছাড়াই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এ এস এম শামসুল আলম কোনো গণশুনানি ছাড়াই বিইআরসির সিদ্ধান্তকে স্বেচ্ছাচারী কাজ এবং বিইআরসি আইনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে বলেন, ‘লোডশেডিং এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অত্যধিক মূল্যে মানুষ যখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে, তখন বিইআরসির এই ধরনের সিদ্ধান্ত জনগণের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুসারে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য সরকার প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে, যা সংকট ব্যবস্থাপনার সহায়তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’
এর আগে ১৩ অক্টোবর বিপিডিবির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় বিইআরসি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেছিলেন, ‘বিপিডিবির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে কিছু লেনদেনের তথ্য জমা দেয়নি। তথ্যের অস্পষ্টতা ছিল। এ কারণেই আমরা ভোক্তাদের ওপর বাল্ক শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব বিশ্লেষণ করিনি।’
বিইআরসি চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, বিইআরসি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বর্তমান আর্থ-সামাজিক এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েছিল। ফলে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত পূর্ববর্তী শুল্ক অনুসারে বিদ্যুতের শুল্ক অপরিবর্তিত রয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপিডিবির বাল্ক বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর সর্বশেষ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয় ১৮ মে। বিপিডিবি গণশুনানিতে বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় এবং বিইআরসির একটি প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন কমিটি ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করে।
বিপিডিবি তার সর্বশেষ পর্যালোচনা আপিল প্রস্তাবে উল্লেখ করে, তার সরবরাহের প্রকৃত খরচ প্রতি ইউনিট আট দশমিক ১৬ টাকা পূর্বের গণনাকৃত ট্যারিফের পরিবর্তে প্রতি ইউনিট আট দশমিক ৯৬ টাকা।
প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে বিপিডিবি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, সংস্থাটির বিদ্যুত বিতরণ সংস্থাগুলোকে সরবরাহ করতে ৮৮ হাজার ৯৯৩ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা (ইউনিট) বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ৭৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা রাজস্বের প্রয়োজন হবে। অফিসিয়াল সূত্র জানিয়েছে, এখন বিতরণ কোম্পানিগুলো খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য তাদের নিজ নিজ প্রস্তাব জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নসরুল হামিদ আরও বলেন, ‘বিতরণ সংস্থাগুলো খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধির জন্য জ্বালানি নিয়ন্ত্রকের কাছে জমা দিতে তাদের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো এখন তাদের প্রস্তাবনা প্রস্তুত করার জন্য কাজ করছে। তারা বাল্ক শুল্ক বৃদ্ধির সম্ভাব্য প্রভাব হিসাব করছে।’
বিপিডিবি কর্মকর্তারা আশা করছেন যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কমপক্ষে ২০ শতাংশ বাল্ক শুল্ক বাড়াবে।
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘সম্ভাব্য ২০ শতাংশ বৃদ্ধি বিবেচনা করে বিপিডিবি বিদ্যুতের খুচরা শুল্ক কমপক্ষে ১২ শতাংশ বাড়াতে চাইছে।’
বিইআরসি একটি গণশুনানির পর ২০২০ সালের মার্চ মাসে খুচরা বিদ্যুতের শুল্ক সর্বশেষ বাড়ানো হয়েছিল।
একটি ঘোষণার মাধ্যমে বিইআরসি ২০২০ সালের ১ মার্চ থেকে কার্যকর হিসাবে খুচরা পর্যায়ে পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ এবং পাইকারি স্তরে আট দশমিক চার শতাংশ সামগ্রিকভাবে গড়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।
ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খুচরা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট (প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা) ছয় দশমিক ৭৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাত দশমিক ১৩ টাকা এবং বাল্ক পর্যায়ে চার দশমিক ৭৭ টাকা থেকে পাঁচ দশমিক ১৭ টাকা করা হয়।