নারী ও পুরুষকে সমানতালে এগিয়ে যেতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলাম ধর্মই একমাত্র, যেখানে নারীদের অধিকার দিয়েছে। মেয়েদের বাবার বাড়ি ও স্বামীর বাড়ি দুই দিকেই ইসলাম ধর্ম অধিকার দিয়েছে। আমি ক্ষমতায় আসার পরে মেয়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়ে ছয় মাস করেছি, এর আগে ছিল তিন মাস। আগে সন্তানের নামের সঙ্গে বাবার নাম থাকত। কিন্তু আমি আসার পরে মায়ের নাম যুক্ত করে দিয়েছি। মায়ের নামও থাকবে। সন্তান মায়ের পরিচয়েও বড় হবে। নারী ও পুরুষকে সমানতালে এগিয়ে যেতে হবে।
রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ শনিবার বিকেলে মহিলা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো অর্জনে নারীদের অবদান থাকতে হবে। সমাজের অর্ধেক নারী। তারা অচল থাকলে সমাজ এগিয়ে যাবে না। নারী-পুরুষ সমানতালে এগিয়ে যেতে হবে। আমি নারীদের বিচারপতি, সচিব, ডিসি, এসপি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পথ সুগম করি। আজকে আমাদের মেয়েরা প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সম্পদে স্বামী ও বাবার সম্পদে নারীর অধিকার দিয়েছে ইসলাম। অথচ তারা ধর্মের নামে নারীদের ঘরে রেখে দিতে চায়। মেয়েরা স্বামীদের কাছে কত কিছু দাবি করে। আমার মাকে দেখিনি কোনোদিন কিছু দাবি করতে। বরং তিনি বাবাকে বলতেন, তুমি তোমার কাজ করে যাও। সংসারসহ সব কিছু আমি দেখব। বাবাকে যখন হত্যা করে, তখনো বলেছিলেন, তাকে যেহেতু হত্যা করেছ, আমাকেও হত্যা করো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর করে দিচ্ছি। সেখানে নারী ও পুরুষকে সমান ভাগ দিচ্ছি। কেউ বউ ছেড়ে দিলে ওই বাড়ি হবে নারীর, পুরুষের নয়। যাতে নতুন ঘর পেয়ে কেউ নতুন বউ না নিয়ে আসে। আমার বাড়ি- আমার খামারে মেয়েদের ট্রেনিং দিয়েছি। দেশের সমগ্র জেলায় জেলায় লিগ্যাল এইড কমিটি করে দিয়েছি। সেখানে জজ সাহেবরা কাজ করছেন। পারিবারিক আইন ও আদালত করা হয়েছে। আমাদের মেয়েরা ঢাকা শহরে কাজ করে, তাদের থাকার জন্য কর্মজীবী হোস্টেল করে দিয়েছি। তারা নিরাপদে কাজ করতে পারে, শহরে চলতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ঢাকায় মেয়েদের চলাচলের জন্য আলাদা বাস করে দেওয়া হয়েছে। আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। ২০০১ এর নির্বাচনের পরে বিএনপি-জামায়াত সারা দেশে যেভাবে নির্যাতন করেছে, মা মেয়েকে একসাথে ধর্ষণ করেছে। অনেক শিশুকে ধর্ষণ করেছে, তারা (সেই শিশুরা) এখনও ট্রমায় রয়েছে। ঠিক পাকিস্তানি বাহিনী যেভাবে অত্যাচার করেছে, বিএনপি-জামায়াত জয়ের পরে এমন অত্যাচার করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা সন্ত্রাস চাই না। যে গ্রেনেড যুদ্ধের মধ্যে ব্যবহার করা হয়, সেই গ্রেনেড ব্যবহার করা হলো সমাবেশে। আমাকে মানবঢাল করে রক্ষা করা হলো। কিন্তু আমরা আইভী রহমানকে হারিয়েছে। খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করেছিল। জনগণ আন্দোলন করে তখন। সে সময় আমাদের নারীদের ওপর অনেক নির্যাতন করেছে বিএনপি। তাদের মেয়েরা মিছিল, সভা করছে, আমরা তো বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু বিএনপির অত্যাচার আমরা ভুলবো কী করে। অগ্নিসন্ত্রাস আমরা কী ভাবে ভুলবো?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাই আমরা বলেছি আপনারা আন্দোলন করেন, মিছিল করেন, মিটিং করেন আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু একটা মানুষ মরলে আমরা আপনাদের ছাড়ব না। বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের সাথে আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নারী ও শিশু নির্যাতন বিরোধী আইন পাস করেছি। বাংলাদেশের নারীরা বৃদ্ধ হয়ে গেলে তার সাথে কেউ থাকে না। কোনো মেয়ে বিধবা হয়ে গেলে তার ঠাঁই কোথাও হয় না। আমরা বৃদ্ধা ও বিধবা নির্যাতনের শিকার নারীদের একটি ভাতা দিচ্ছি। নারীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমরা এই ব্যবস্থা করেছি। দেশে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়েছে, আগে যে গম আমরা ২০০ টাকায় কিনতাম তা ৬০০ টাকায় বেড়ে গেছে। বাংলাদেশে একসময় খাদ্যে ঘাটতি ছিল। আজকে আর খাদ্যে ঘাটতি নেই। এক টুকরো জমিও যেন অনাবাদী না থাকে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। খালি জমি থাকলে কিছু না কিছু আবাদ করেন।
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কাদের সাথে আলোচনা করবো? কাদের সাথে ডায়লগ? যারা আমার বাবার খুনি, যারা আমাকে হত্যা করতে চায় তাদের সাথে? বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে, তাদের সাথে আলোচনা হবে। জনগণ নির্বাচনে ভোট দিবে।