মাদকসহ আটক ছাত্রদলকর্মীর জন্য পরীক্ষাকেন্দ্রে তালা ছাত্রলীগের
নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অভিযান চালিয়ে এক ছাত্রদল কর্মীসহ তিন জনকে আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। আজ বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পর্ব সমাপনী পরীক্ষা চলাকালে ক্যাম্পাসের ভেতরে এই অভিযান চালানো হয়।
এর কিছুক্ষণ পরই আটক ছাত্রদের ছাড়িয়ে আনার দাবিতে পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রধান গেট তালাবদ্ধ করে পরীক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় থেকে ৮ম পর্বে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পর্ব সমাপনী ব্যবহারিক পরীক্ষা চলছিল। কয়েকটি ধাপে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষায় প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিল। পরীক্ষা চলাকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাম্পাসের ভেতরে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টহল টিমের সদস্যরা। সেখানে মাদক সেবনরত অবস্থায় আটক করা হয় তৌহিদ, মারুফ ও রাসেল নামের তিন শিক্ষার্থীকে। এদের মধ্যে সিভিল টেকনোলজিতে ষষ্ঠ পর্বে অধ্যয়নরত তৌহিদ ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানের পরই জেলা ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক তানভীর ইসলামের নেতৃত্বে সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন বহিরাগত ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এর পরই ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে প্রধান গেটটি তালাবদ্ধ করে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে সেখানে থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। এ সবই করেন তানভীর আহমেদের সহযোগী সদর উপজেলা ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সিহাব আহম্মেদ।
পলিটেকনিক ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য জুলকার নাইন আরিয়ানসহ বেশ কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীকে উসকে দিয়ে মাদকসহ আটক তিন ছাত্রকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে স্লোগান দিতে বাধ্য করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় সব পর্বের পরীক্ষা। ওই মুহূর্তে যেসব পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে এসেছিল, তাদের সবাইকে মূল গেটের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একজনকে মারধর করার অভিযোগও ওঠে। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা পর ক্যাম্পাসে এসে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে শিক্ষার্থীরা আবারও পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করে। ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডে পুরো ক্যাম্পাসে পরীক্ষা বন্ধ থাকে প্রায় তিন ঘণ্টা। এতে চরম বিপাকে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ক্যাম্পাসের সামনেই সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলামের বাড়ি হওয়ায় তিনি এখানকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর ভাই তানভীর প্রায়ই কলেজে এসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হেনস্থা, মারধরসহ বিভিন্ন ছাত্রাবাসে গিয়ে ভয়-ভীতি দেখান। তানভীর ইসলামের মদদেই ক্যাম্পাসে বগিরাগত মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীরা অবাধ যাতায়াত করে থাকে। আটক ছাত্রদলকর্মী তাঁদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাব্বির রহমান রেজভী বলেন, ঘটনাটি জানার পরই ক্যাম্পাসে গিয়ে পলিটেকনিক প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। আটক ছাত্রদের মধ্যে একজন ছাত্রদলকর্মীও রয়েছে। সাধারণ ছাত্রদের অধিকার আদায়ের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। একজন মাদকসেবী কখনোই ছাত্রলীগের বন্ধু হতে পারে না। ছাত্রদলকর্মীকে ছাড়িয়ে আনতে যারা এমন ঘৃণিত কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থ্যা নেওয়া হবে।
নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আব্দুর রকিব বলেন, বহিরাগতরা মূল গেট তালাবদ্ধ করলে প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আটক শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক লোকমান হোসেন বলেন, ‘আটক ছাত্ররা পরীক্ষার্থী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। মাদকাসক্তদের সুস্থ জীবনে ফেরাতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তাদের কারাগারে না পাঠালেও মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হতে পারে।’