নিবন্ধন পেতে উচ্চ আদালতে যাবে বাংলাদেশ জাতীয় দল
নির্বাচন কমিশন থেকে দলের নিবন্ধন না পেয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। দলটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা আজ বৃহস্পতিবার (১১ মে) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।
সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনে মুচলেকা দিয়ে দলের নিবন্ধন নেব না। আমরা সব নিয়ম মেনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। আমরা এখন উচ্চ আদালতে যাব। স্বল্প সময়ের মধ্যে আমাদের এ প্রক্রিয়াটি জানতে পারবেন।’
এহসানুল হুদা অভিযোগ করেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) আহ্বান জানালে শর্ত মেনে আবেদন করেছিল বাংলাদেশ জাতীয় দল। কিন্তু ইসির শর্ত পূরণ করা এবং সব যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও দলের নিবন্ধন আবেদন অত্যন্ত অযৌক্তিকভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘দলের নিবন্ধন পাওয়ার তিনটি শর্তের মধ্যে আমরা দ্বিতীয় শর্ত (আ) ধারা অনুযায়ী আবেদন করি। যে শর্তের মধ্যে উল্লেখ আছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে যেকোনো একটিতে দরখাস্তকারী দল নির্বাচিত এলাকায় প্রদত্ত মোট ভোটের শতকরা পাঁচ ভাগ লাভের সমর্থনে কমিশনকে প্রত্যয়নপত্র দিতে হবে।’
এহসানুল হুদা বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সিরাজুল হুদা ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তৎকালীন ময়মনসিংহ-২৩ (বর্তমানে কিশোরগঞ্জ-৫) আসন থেকে খেজুর গাছ মার্কা প্রতীকে অংশগ্রহণ করে প্রদত্ত ভোটের ১২ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পান। আমরা ওই ভোটের ফলাফলের দালিলিক বিবরণ দাখিল করে কমিশনের নিকট ১২ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পাওয়ার প্রত্যয়নপত্রের জন্য আবেদন করি। কিন্তু, কমিশন চিঠিতে জানায় কমিশনে তথ্য সংরক্ষিত না থাকায় প্রত্যয়নপত্র প্রদান করা সম্ভব নয়। আমরা কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত প্রাপ্ত ভোটের ফলাফলের যে তালিকা দাখিল করলাম, এটা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে তথ্য সংরক্ষিত নেই বলা একেবারে অযৌক্তিক।’
সৈয়দ এহসানুল হুদা আরও বলেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, ১২ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গিয়ে কমিশন আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করে যেন আমরা নতুন কোনো দল হিসেবে নিবন্ধনের দরখাস্ত করেছি। তারা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের নাম পদবির সঙ্গে এনআইডি নম্বরসহ অনেককিছু দিতে বলে, যা নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত আবেদনপত্রের সঙ্গে আবশ্যকীয় দলিলাদি বহির্ভূত।’
এহসানুল হুদা বলেন, “চূড়ান্তভাবে কমিশন উল্লেখ করেছে, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯০ খ(১)(ক)(আ) এর শর্ত প্রতিপালিত না হওয়ায় কমিশনের নিকট দলটি নিবন্ধের যোগ্য বিবেচিত হয়নি।’ অথচ কমিশন গণপ্রতিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর যে ধারা উল্লেখ করে জাতীয় দলের শর্তপূরণ হয়নি বলে নিবন্ধন অযোগ্য ঘোষণা দিয়েছে, সেই ধারায় একমাত্র শর্ত হচ্ছে, ৫ শতাংশ ভোটপ্রাপ্তি। যেটা জাতীয় দল দ্বিগুণেরও বেশি অর্থাৎ ১২ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে নির্বাচন কমিশন নজিরবিহীন একটি মন্দ নজির সৃষ্টি করেছে, যা ন্যক্কারজনক ও লজ্জার।”
জাতীয় দলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, ৪০টি দলের কোনটি কোন প্রক্রিয়ায় নিবন্ধনের যোগ্য হয়েছে, তা প্রকাশ করে জনগণকে জানানো হোক এবং যে ১২টি দলকে প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছে তাদের নিবন্ধন পাওয়ার যৌক্তিক কারণ ও যোগ্যতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তুলে ধরা হোক। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী আমাদের এবং জনগণের উপরোক্ত বিষয় সম্পর্কে জানার অধিকার আছে। তাছাড়া আমরা আইনের আশ্রয় নিয়ে প্রমাণ করব, বাংলাদেশ জাতীয় দল নির্বাচন কমিশনের বিধি মোতাবেক নিবন্ধন পাওয়ার শতভাগ যোগ্য।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আহাদ, সারোয়ার আলম, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাবিব লিটন, জিয়াউল হক জিয়া ও প্রচার সম্পাদক বেলায়েত হোসেন শামীমসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।