শিশু আফরিনকে হত্যা করে নিজেই খুঁজতে বের হন সৎমা
ছয় বছরের আফরিন। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর থেকে থাকত সাভারের দাদা-দাদির কাছে। গত আট মাস আগে আফরিনের বাবা মতিয়ার রহমান দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তারপর থেকে মেয়েটি বাবা ও সৎমা মোসা. ফুলি খাতুনের সঙ্গে থাকত। রাজধানীর মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় টিনশেডের একটি বাসায় তারা থাকত। আর আফরিনের মা বড় মেয়েকে নিয়ে থাকতেন যশোরে।
গত ৬ জানুয়ারি, মতিয়ার রহমান তখন বাড়ির বাইরে। সে সময় ফুলির (২৬) ফুফাত ভাই সোহাগ (৩৫) ওই বাসায় যান। বিপত্তি বাধে তখন, যখন আফরিন দেখে ফেলে; ফুলি ও সোহাগ আপত্তিকর অবস্থায় ছিলেন। সে সময় আফরিন ফুলিকে বলে দেয়, তার বাবা বাড়ি ফিরলে সব বলে দেবে। এ কথা শুনে তারা দুজন ক্ষেপে যান। ফুলি ও সোহাগ পরিকল্পনা করেন আফরিনকে হত্যা করার।
এরপর সোহাগের সঙ্গে পরামর্শ করে আফরিনকে পাশের বাসার গ্রাউন্ডফ্লোরের মাটির নিচে থাকা পানির রিজার্ভ ট্যাংকে ফেলে দেন। হত্যার পর ঘটনা অন্যদিকে ঘোরাতে ফুলি নিজেই আফরিনকে খুঁজতে বের হন। আশপাশের মানুষের কাছে জানতে চান, আফরিনকে কেউ দেখেছেন কিনা। আশপাশের অনেকের কাছে তিনি এ ব্যাপারে জানতে চান।
ওই সময় পানি নিতে আসা এক প্রতিবেশী নারী ট্যাংকে শিশুর স্যান্ডেল ভেসে থাকতে দেখেন। তার সন্দেহ হয়। পরে তিনি অন্যদের তার সন্দেহের কথা জানান। পরে ওই রিজার্ভ ট্যাংকে তল্লাশি চালিয়ে আফরিনকে ডুবন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রথমে আল হেলাল ও পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সে সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক আফরিনকে মৃত ঘোষণা করেন। তখন সবাই ভেবেছিলেন, খেলতে গিয়ে অসাবধানতাবশত আফরিন ট্যাংকে পড়ে যায়।
ঘটনার দিন, অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হোসনা আফরোজা এনটিভি অনলাইনকে চাঞ্চল্যকর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘যেদিন আফরিনের লাশ উদ্ধার করা হয়, তখন জানা যায়নি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। পরে আমার সন্দেহ হয় ফুলির আচরণ দেখে। আমার এ সন্দেহের কথা আমি মতিয়ার রহমানকে জানাই এবং ফুলির দিকে নজর রাখতে বলি। পরে মতিয়ার ফুলিকে মনমরা হয়ে থাকতে দেখেন এবং কী হয়েছে তা জানতে চান। সে সময় ফুলি স্বীকার করেন, আফরিনকে তিনি হত্যা করেছেন। তার ভুল হয়ে গেছে। এরপর ১২ জানুয়ারি কাফরুল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আফরিনের মা সোনিয়া খাতুন (২৫)। মামলার এজাহারে তিনি লিখেছেন, মেয়ের ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়। এরপর আফরিনের বাবা ঢাকায় ফিরে ফুলিকে মনমরা থাকতে দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি আফরিনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। বলেন, তার ভুল হয়ে গেছে।’
তদন্ত কর্মকর্তা হোসনা আফরোজা বলেন, ‘মামলার পর আমি রাজবাড়ী থেকে ফুলিকে গ্রেপ্তার করি। গ্রেপ্তারের পর ফুলি আমার কাছেও স্বীকার করেন, তিনি ও সোহাগ মিলে আফরিনকে হত্যা করেছেন। তাদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় আফরিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান ফুলি। শুধু তাই নয়, ফুলি গত শনিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারপর তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। সোহাগ ঢাকায় রয়েছেন। তিনি পাঠাও চালান। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। আশা করছি, দ্রুতই তাকে আইনের আওতায় আনতে পারব।’