সুজন হত্যার প্রতিবাদে শাহবাগে অবরোধ ঢাবি শিক্ষার্থীদের
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় মাদারীপুরে পুলিশের গুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুজন মৃধার মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি এবং জড়িত পুলিশ সদস্যদের ফাঁসির দাবিতে ফের রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ সাধারণ শিক্ষার্থী।
আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাজধানীর এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবরোধ করে করে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ সময় শাহবাগের চারপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
একই দাবিতে আগামীকাল বেলা ১১টায় শাহবাগে মানববন্ধন করবেন বলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান। এর আগে গত শনিবার রাতে শাহবাগে এবং গতকাল রোববার দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনে একই দাবিতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী।
জানা যায়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পরে মিছিলটি শাহবাগ মোড়ের মূল সড়ক অবরোধ করলে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় তারা এ ঘটনায় দোষী পুলিশের শাস্তিসহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
সুজন মৃধার সহপাঠী সৈকত কুমার রিকি বলেন, পুলিশ বলছে ব্যালট পেপার নিয়ে পালাচ্ছিল। কিন্তু এলাকাবাসী বলেছে, সুজন নামাজ পড়ে ঘটনা শুনে ভোটকেন্দ্রের দিকে যায়। সেখানে প্রথমে তাঁর দাদা জয়লাভ করার কথা বলা হলেও পরে বিকল্প প্রার্থী জয়লাভ করেছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ নিয়ে সেখানে পুলিশের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে কনস্টেবল মাসুদ, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) এনামুলের নির্দেশে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়। মাসুদের গলায় গুলি লাগলে সেখানেই নিথর হয়ে পড়ে যান।
সুজনের সহপাঠী আরো বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া কেন গুলি করা হলো? পরে প্রতিপক্ষ গুলি করার কথা কেন বলল? আমাদের প্রশ্ন এই দুইটা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা চারটি দাবি জানান। এগুলো হলো, সুজন হত্যার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি, পুলিশের ব্যালট পেপার চুরি করার অপবাদ দেওয়ায় পুলিশকে ক্ষমা চাইতে হবে, কনস্টেবল মাসুদ, এএসআই এনামুল এবং হারুন-অর-রশিদসহ জড়িত সবার বিচার করতে হবে, পরিবারের বিরুদ্ধে দেওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
সৈকত কুমার রিকি এ সময় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দেলন অব্যাহত থাকবে। আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুরে শাহবাগে আমরা আবার আসব।’
এ সময় শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ব্যানার এবং প্লাকার্ডে লেখা ছিল, ‘ঢাবি ছাত্র সুজন মৃধাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই’, ‘আমার বন্ধু আমার ভাই, সুজন হত্যার বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর সুজন’ প্রভৃতি।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করছি।’ বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
গত ৩১ মার্চ দ্বিতীয় দফার ইউপি নির্বাচনে ভোটগ্রহণকালে মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সুজন মৃধা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং উপজেলার ধুরাইলের দক্ষিণ বিরঙ্গল গ্রামের বাচ্চু মৃধার ছেলে।