মাথায় গুলি লেগে রুবেলের মগজ ছিটকে পড়ে রাস্তায়
গত ১৯ জুলাই শুক্রবার রাত ৮টায় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছিলেন তরিকুল ইসলাম রুবেল (২৪)। ঢাকার মিরপুর-১৫ সেকশনে রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিতে চাকরি করতেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কবলে পড়ে জীবন বাঁচাতে কাভার্ড ভ্যানের আড়ালে গিয়ে লুকিয়েও নিজেকে বাঁচাতে পারেননি তিনি। গুলি লাগে মাথায়। গুলির আঘাতে মগজ ছিটকে গিয়ে পড়ে রাস্তায়।
রুবেল কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দামিহা ইউনিয়নের হাছলা গ্রামের কৃষক মো. ফরিদ উদ্দিনের ছেলে। পারবার সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের গুলিতে নিহত হনতিনি।
চার ভাই দুই বোনের মধ্যে রুবেল পঞ্চম এবং ভাইদের মধ্যে তৃতীয়। সবার বড় ভাই সোহেল হোসেন গাজীপুরে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। দ্বিতীয় ভাই জুয়েল আহমেদ তাড়াইল মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সবার ছোট ভাই বাড়িতে থাকে এবং দুই বোনেরই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় স্বামীর সংসারে আছেন।
রুবেল সংসারে আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য ঢাকায় ওই কোম্পানিতে চাকরি নেন। দেড় বছর আগে হবিগঞ্জ জেলার এক মেয়েকে বিয়ে করেন। তাদের কোনো সন্তান নেই।
ঢাকার মিরপুরে একই এলাকায় থাকা রুবেলের চাচাতো বোনের স্বামী মো. শফিকুল ইসলাম প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানান, ওই দিন রাতে মিরপুর-১৩ নম্বর এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় রুবেল নিজেকে বাঁচাতে একটি কাভার্ড ভ্যানের পেছনে লুকিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। তখন তিনি অবস্থা বুঝতে উঁকি দিতেই মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। গুলিটি তাঁর বাম কানের পাশ দিয়ে মাথায় ঢুকে কপাল ভেদ করে বেড়িয়ে যায়। গুলির আঘাতে মগজ ছিটকে গিয়ে রাস্তায় পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর পরই নিহত রুবেলকে চিনতে পেরে একজন আমাকে মুঠোফোনে কল করে ঘটনাটি জানায়। আমি সেখানে ছুটে যাই। পরে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনার ব্যবস্থা করি।’
রুবেলের বাবা বলেন, ‘রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে মো. শফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে রুবেলের মৃত্যুর কথা জানান। আমার ছেলে কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিল না। সে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় গিয়েছিল। শুধু শুধু আমার ছেলেকে হত্যা করে আমার বুক খালি করা হয়েছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
রুবেলের মা হেলেনা আক্তার বারবার বুক চাপড়ে বলছিলেন, ‘আমার রুবেলকে কেন হত্যা করা হলো। আমার বুকের ধন ফিরিয়ে দাও।’
নিহত রুবেলের বড় ভাই জুয়েল আহমেদ বলেন, রাত আড়াইটার দিকে লাশবাহি অ্যাম্বুলেন্স আমাদের গ্রামের বাড়িতে পৌছায়। পরের দিন শনিবার জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে দাফন করা হয়। পরে আমার সঙ্গে তাড়াইল থানার সেকেন্ড অফিসার লুৎফর রহমান মুঠোফোনে যোগাযোগ করে পুরো বিষয়টি জানেন। রুবেলের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা ঢাকায় কাফরুল থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে চাইলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি।’
তাড়াইল থানার সেকেন্ড অফিসার লুৎফর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে রুবেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও কার গুলিতে মৃত্যু হয়েছে সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
গুলিতে রুবেলের মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে দামিহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৃত্যু সনদ দিয়েছেন।