স্বৈরাচার পতনে রাজধানীজুড়ে উল্লাস
চারদিকে আজ উৎসবের আমেজ। দুপুরে উল্লাসিত জনতা শুরু করে গণভবনের উদ্দেশে যাত্রা। এরই মধ্যে আসে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার দেশ ত্যাগের খবর। সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভ পরিণত হয় উল্লাসে। রাজপথসহ অলিগলিও সেজে ওঠে রঙে রঙে। রাজধানী মুখরিত হয়ে ওঠে ‘স্বৈরাচার পালিয়েছে, দেশ আজ সেজেছে’ স্লোগানে।
আবু বকর নামে একজন বলেন, আমাদের দাবি ছিল কোটা সংস্কার। পরে আমাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। এই স্বৈরাচার শিশুদেরও ছাড় দেয়নি। রাজাকারের বাচ্চা বলে আমাদের গালাগাল করেছে। তারপর সেটিও বলেননি বলে দাবি করেছেন। আজ তার পতনে আমরা এজন্য আনন্দিত যে, আমরা আজ মুক্ত। আমরা স্বাধীন দেশ থেকে শকুনি থাবা মুক্ত। আমরা মুক্তি যুদ্ধ দেখিনি, কিন্তু দেশকে আজ মুক্ত করেছি।
রাফায়া তার মায়ের কোলে ছিল। বয়স মাত্র ১০ মাস। তাকে কোলে করেই রাজপথে নেমেছিলেন শাহনাজ খাতুন। তিনি বলেন, আমরা আজ ‘মার্চ টু ঢাকা’র জন্য বের হয়েছিলাম। বের হতেই শুনি দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশ স্বাধীন বলতে, আমরা এতদিন স্বাধীন দেশেও পরাধীন ছিলাম। এক স্বৈরশাসকের কাছে আমরা দিন দিন নিষ্পেশিত হচ্ছিলাম। আজ শেখ হাসিনা নামের সেই ভয়ঙ্কর রাক্ষসির পতনে আমরা আনন্দিত। আমি আমার মেয়ের ভবিষ্যতকে তার চোখে দেখাতেই তাকে নিয়ে এসেছি। যেন সেও কোনো অন্যায় দেখলে প্রতিবাদী হয়। এই দেশে কোনো অন্যায়কারীর ঠাঁই হবে না। দেশের প্রশ্নে সবাই এক।
গণভবনের লেকে গোসল করছিলেন শত শত মানুষ। তারা সেখানে নেমে গোসলের পাশাপাশি নানা স্লোগান করছিলেন। একইসঙ্গে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। তাদের মধ্যে একজন সোহেল। তিনি বলেন, আজ আমরা স্বৈরশাসকের থাবা থেকে মুক্ত হয়েছি। আজ আমাদের মধ্যে কোনো দল নেই। আমরা সবাই আমাদের আন্দোলনের সফল হয়েছি। এই আন্দোলনে শহীদদের কথা স্মরণ করছি। তাদের রক্তে বিনিময়ে আমাদের এই অর্জন যেন সবাই মনে রাখে যে, আবারও কেউ এমন কোনো চিন্তা-চেতনায় হাঁটলে তাদের পতনও এর থেকে ভয়ঙ্কর হবে।
জুলাই মাসের প্রথম দিন থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে মাঠে নামেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের সেই আন্দোলনে সংহতি জানায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে যোগ দেন অভিভাবকরা। একপর্যায়ে চীন থেকে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে সে সময়ে প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে ইঙ্গিত করেন। এরপর আন্দোলন আরও জোরদার হয়ে ওঠে। সেদিন থেকে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার/কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’ এরপর রংপুরে আবু সাঈদসহ বেশ কয়েকজন নিহত হলে একদফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থী-জনতা।
সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে সব ধরনের চেষ্টা চালায়। দফায় দফায় সংঘর্ষে শত শত শিক্ষার্থী প্রাণ হারান। সঙ্গে সাধারণ জনতাও মারা যায়। বাদ যায়নি শিশু-কিশোরও। পরপরই ফুঁসে ওঠে সব শ্রেণির মানুষ। তারপর আজ সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলো। বেলা আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাত্রা করে। এ সময় তাঁর সঙ্গে তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তাঁরা হেলিকপ্টারে ভারতের ত্রিপুরার উদ্দেশে রওনা দেন। এর আগে তিনি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি সে সুযোগ পাননি।