দুই বছরের মধ্যে মোংলা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে : নৌ-উপদেষ্টা
মোংলা বন্দরকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্রান্ডিং করার আহবান জানিয়েছেন নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। আজ বুধবার (৬ অক্টোবর) সকালে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।
সাংবাদিক, শিপিং ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে মোংলা বন্দরকে নিয়ে বেশি বেশি প্রচার-প্রচারণার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, মোংলা বন্দর এতদিন প্রচারের বাইরে ছিল। আপনারা যদি এই বন্দরকে নিয়ে প্রচারণা করেন তাহলে এটি দেশ-বিদেশে আরো অনেক বেশি পরিচিতি লাভ করবে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রচারণার পদক্ষেপ হিসেবে প্রচারপত্র তৈরি করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রচারপত্র তারা আমাদের দেশের বাইরে যে কূটনৈতিক মিশন রয়েছে, সেখানেও পাঠাবে। এছাড়া, মোংলা বন্দরকে দেশে বিদেশে তুলে ধরার লক্ষ্যে চলতি মাসে (নভেম্বর) জনপ্রিয় টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ মোংলা বন্দরে ধারণ করা হবে।
নৌপরিবহণ উপদেষ্টা বলেন, মোংলা বন্দর দেশের পুরোনো একটি বন্দর। এই বন্দরের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে। কিন্তু, ভবিষ্যতের জন্য যেভাবে তৈরি হবার কথা, এই বন্দরটি তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। তবে আগামী দুই বছরের মধ্যে মোংলা বন্দরে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পাবে।
উপদেষ্টা বলেন, এখানে কন্টেইনার টার্মিনাল নেই। আশা করছি অতি সত্তর একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে। চীনের অর্থায়নে জি টু জি পদ্ধতিতে একটি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হবে। এ বিষয়ে কমিটি গঠন করা হয়। পুরো খরচটাকে কীভাবে কমানো যায় এ বিষয়ে কমিটি কাজ করেছে। বাংলাদেশে বোধ হয় এটি প্রথম যেখানে চুক্তি হবার পরও পুরো বাজেটকে কম করা হয়েছে। প্রায় ২৭৫ কোটির মতো বাজেট কমিয়ে আনা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ একটি কমিটি ৭ দিন ধরে তাদের সাথে আলোচনা করে বাজেট কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং কিছু আনুষঙ্গিক কাজ আশা করি দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প শেষ হলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর যে বিশাল চাপ রয়েছে, তা কমে আসবে। বর্তমান বিশ্বে রিজিওনাল কানেক্টিভিটি খুব দরকার।
এ জন্য মোংলা বন্দরকে আন্তর্জাতিক বন্দর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। প্রতিবেশি ল্যান্ড-লকড দেশ যেমন নেপাল, ভুটান তাদের জন্য এই বন্দর ব্যবহারের উপযোগী হবে। এখানে রেল, নৌ ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মোংলা বন্দরকে আঞ্চলিক বন্দর হিসেবে ব্যবহার করার বিষয় গতকাল আলোচনা হয়েছে। দুটি স্থলবন্দর যা আঞ্চলিক সংযোগের জন্য তৈরি হচ্ছে একটি আখাউড়া আরেকটি সিলেটে। সিলেটে যেটি তৈরি হবে সেটা নেপাল ও ভুটানের কাছাকাছি। আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারতের ওপর নির্ভর করবে যে তারা এই স্থলবন্দরটিকে ব্যবহার করতে দেবে কিনা। আমি আশা করি, তারাও চাইবে যে এই আঞ্চলিক সংযোগটি যেন হয়।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ভারতের অর্থায়নে আরেকটি প্রকল্প আছে যেটি এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। দুটো ইয়ার্ড ও আনুষঙ্গিক রাস্তা তৈরি হবে। ভারত এ প্রকল্পের জন্য কনসাল্টটেন্ট নিয়োগ করলেও ঠিকাদার নিয়োগ করেনি বলে এটির কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। অচিরেই শুরু হবে। আশা করি চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দরের বর্তমান অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
মোংলা বন্দরের বেশ কিছু জায়গা অব্যবহৃত আছে। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য খালি জায়গাগুলো কাজে লাগাতে চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ইকো পার্ক তৈরি করা হলে দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে ঘুরতে আসবে। মোংলা বন্দরের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
মোংলা বন্দরের চলমান প্রকল্পসমূহের কার্যক্রম
উপদেষ্টা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং কাজের মান ও অগ্রগতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। চলমান সকল প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
পরিদর্শনকালে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান ও বন্দরের অন্যান্য কর্মকর্তা ও নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।