জঙ্গিদের মাথায় পাগড়ি, হাতে ছিল ছুরি
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, রাজধানীর কল্যাণপুরে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াতের অভিযানে নিহত নয় জঙ্গির মাথায় পাগড়ি ও হাতে ছুরি ছিল।
আজ মঙ্গলবার ঘটনাস্থলের কাছে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আইজিপি।
পাঁচ মিনিটের বেশিক্ষণ ধরে কথা বলার সময় অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত জানান আইজিপি। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, আমরা দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছি। ব্লক রেইড (অভিযান) করছি, সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছি। ডিএমপিতে (ঢাকা মহানগর পুলিশ) এটাকে অত্যন্ত কার্যকরভাবে এই ব্লক রেইড, সাঁড়াশি অভিযান চলছে। তারই অংশ হিসেবে গতকাল এই এরিয়ায় (কল্যাণপুরে) আমরা অভিযান চালাচ্ছিলাম। অভিযানের এক পর্যায়ে যখন তল্লাশি করতে যাবে, ওই অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকবে, তখন তারা গ্রেনেড চার্জ করছে (ছুড়ে মারে)। তারা বোমা চার্জ করছে। বোমা আমাদের পুলিশের ওপর পড়ে নাই। আমরা সতর্ক হয়ে গেছি যে, ওখানে জঙ্গি আছে।’
‘তো, সাথে সাথে ওখানে যে পুলিশ আছিল, তারা কর্ডন (ঘিরে) করে রাখছে। নিশ্ছিদ্র কর্ডন করছে, তারা যেন না বেরোতে পারে। আশপাশে সব কটা বিল্ডিংয়ে পুলিশ অবস্থান নেয় যেন তারা পালাতে না পারে। আমাকে যখন জানানো হয়, তখন রাত বোধ হয় ১টা ৪০। এডিশনাল পুলিশ কমিশনার (এসি) আমাকে জানাইছে। সাথে সাথে আমি বলছি ডিসি (উপকমিশনার) মিরপুরকে যে, কর্ডন করে রাখো ভালো করে। তোমাদের কোনো কাজ করা লাগবে না, যাতে না পালাইতে পারে।’
অভিযানে সোয়াতের ভূমিকা নিয়ে আইজিপি বলেন, ‘আমরা আমাদের স্পেশালাইজড (বিশেষায়িত) যে ইউনিট আছে, সোয়াত, বোম ডিসপোজাল টিম (বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল) এবং যারা এই অপারেশনে পারদর্শী, তাঁদের আমরা এখানে পাঠাইছি। পাঠানোর পর তারা রেকি করছে এবং অভিযান করার পূর্বে আমাদের যে সমস্ত প্রস্তুতি নিতে হয়, সে প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। এবং আমরা রাতের বেলা না করে, রাতের বেলা করলে পুরো এলাকা আতঙ্ক হবে, সূর্যের আলো যখন শুরু হইছে, ৫টা ৫১ মিনিটে আমাদের অভিযান শুরু হয়েছে।’
‘অভিযানের একপর্যায়ে ওরা দরজা খুলে গুলি করতে করতে পালাতে চেষ্টা করছিল। পুলিশ আগে থেকে অবস্থান নিছে। তখন পুলিশের সাথে গুলিবিনিময় হয়। আমি একটু আগে দেখে আসলাম যে নয়জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। সবার পরনে জঙ্গি পোশাক, যেটা গুলশানে তারা অভিযানে যে পোশাক পরেছিল, কালো পোশাক, সবার কাছে একটা ব্যাগপ্যাক আছে, ব্যাগ আছে। মাথায় পাগড়ি আছে, হাতে নাইফ (ছুরি) আছে। তাদের ব্যাগগুলোর মধ্যে নিশ্চয়ই তল্লাশি করলে আমরা কিছু পাব।’
অভিযানের বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে জানিয়ে এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘আমাদের বোম ডিসপোজাল টিম ওখানে কাজ করতেছে, …লাগবে। …হয়ে গেলে পরে আপনাদেরকে ওখানে পুলিশ কমিশনার যখন নির্দেশ দিবে, যখন আপনারা ওখানে যাওয়া নিরাপদ মনে হবে, আপনাদেরকে নিয়ে যাবে। আপনারা ওখানে নিজেরাই দেখতে পাবেন।’
“বিভিন্ন গোয়েন্দা সোর্স (সূত্র) থেকে আমরা অনুমান করতেছিলাম ঢাকায় তারা একটা বড় ধরনের ঘটনা ঘটাবে। কাজেই ঘটনা যাতে না ঘটাতে পারে, সে জন্য আমাদের অভিযান ছিল। আমরা এই অভিযানের নাম দিয়েছি ‘অপারেশন স্টর্ম টোয়েন্টিসিক্স’।”
অভিযানে একজন গ্রেপ্তার হয়েছে জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘এখন একজন গ্রেপ্তার আছে। সে বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় আছে। সে হাসপাতালে আছে।’
‘আমরা তো মনে করি, এগুলো সব জেএমবির (জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) লোক। ওরা দাবি করে, আমরা আইএসের (জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট) লোক। কিন্তু আইএসের সঙ্গে আমরা কোনো সম্পৃক্ততা কখনো পাইনি। এরা সব স্থানীয় বাংলাদেশেরই জঙ্গি।’
অভিযানে নিহত নয়জনের বিষয়ে আইজিপি বলেন, ‘গুলশান ঘটনা যে গ্রুপ করছে, জেএমবি আমরা মনে করি, তারা ওই গ্রুপেরই লোক। আমাদের তাই মনে হয়। তাদের পোশাক-আশাক দেখে ওই গ্রুপের লোকই মনে হচ্ছে।’
অভিযানে সোয়াতের ভূমিকার প্রশংসা করে আইজিপি বলেন, ‘এই সোয়াত টিম যে ভূমিকা পালন করছে, আমার মনে হয় বিশ্বের অন্য কোনো দেশ এত বড় অভিযান, এত সাফল্য দেখাতে পারেনি। এই সোয়াত টিম আমাদের গর্ব। আমাদের জাতির গর্ব। আপনারা এই জিনিসটা তুলে ধরবেন।’