পাহাড়ে রোববার হরতাল, সভাস্থল ঘেরাওয়ের ঘোষণা
অবশেষে বহুল আলোচিত পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা বসছে কাল রোববার রাঙামাটিতে। সভায় অংশ নিতে কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ার উল হক আজ শনিবার রাঙামাটিতে এসে উপস্থিত হয়েছেন।
কমিশনের অন্য সদস্যদেরও আজ রাতের মধ্যে এবং কাল রোববার সকালের মধ্যে রাঙামাটিতে উপস্থিত হবেন বলে জানিয়েছে সূত্র। তবে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার দেশে না থাকায় তাঁর প্রতিনিধিত্ব করবেন অন্য কোনো সরকারি কর্মকর্তা। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এ দিকে বৈঠককে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীও রাঙামাটি আসছেন বলে জানা গেলেও তিনি বৈঠকে যোগ দেবেন কি না সেটা নিশ্চিত করতে পারেনি কোনো পক্ষই।
তবে ভূমি কমিশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র দাবি করেছে, কমিশনের সভায় যোগ দিতে এবং কমিশনের কার্যক্রম বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতেই রাঙামাটি আসছেন তিনি।
এদিকে এই বৈঠকের বিরোধিতা করে কাল রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে বাঙালিভিত্তিক সংগঠনগুলো। পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য বাঙালি শ্রমিক গণপরিষদ, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন এই হরতালের ডাক দেয়।
আজও সংশোধিত ভূমি কমিশন আইন ও সভার বিরোধিতা করে কর্মসূচি পালন করে তিনটি বাঙালিভিত্তিক সংগঠন। সকালে রাঙামাটিতে পার্বত্য ভূমি রক্ষা আন্দোলন নামে একটি নতুন সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। সংগঠনটি সকালে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেদের আত্মপ্রকাশ ও পার্বত্য বাঙালিদের ভূমির অধিকার রক্ষায় কাজ করার ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনীর প্রতিবাদে আগামীকাল তিন পার্বত্য জেলায় ডাকা হরতালে সমর্থন ঘোষণা করে।
এ সময় সংগঠনটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম মুন্না, অ্যাডভোকেট আবছার আলী, জাহাঙ্গীর কামাল ও কাজী মো. লোয়া বক্তব্য দেন।
এদিকে সকালেই শহরের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে পার্বত্য গণপরিষদ ও পার্বত্য বাঙালি ছাত্র ঐক্য পরিষদ পৃথক আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করে রোববারের হরতালে সমর্থন ঘোষণা করে এবং পার্বত্য বাঙালিদের ভূমির অধিকার রক্ষায় ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের ঘোষণা দেয়।
এ সময় পার্বত্য গণ-পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার, মহাসচিব অ্যাডভোকেট আলম খান বক্তব্য দেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে পাহাড়ের ২৪ বছরের সশস্ত্র বিদ্রোহের আপাত অবসান হলে প্রায় দুই হাজার সশস্ত্র শান্তি বাহিনীর গেরিলা সন্তু লারমার নেতৃত্বে অস্ত্র সমর্পণের মধ্য দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। এরপর পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি সমস্যা ও বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠন করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন। কিন্তু বারবার কমিশনের চেয়ারম্যান পরিবর্তন করেও কমিশনকে কার্যকর করা যাচ্ছিল না কমিশন আইন নিয়ে আঞ্চলিক পাহাড়ি দলগুলোর আপত্তির কারণে।
সর্বশেষ গত ৩ আগস্ট সরকার প্রয়োজনীয় সংশোধনী করে আইনটির খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু বাঙালিভিত্তিক সংগঠনগুলো এই সংশোধনীর তীব্র বিরোধিতা করতে শুরু করে। তাদের দাবি এই সংশোধনীর কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিরা ভূমি থেকে উচ্ছেদ হবে। এর প্রতিবাদে তারা দুদিনের হরতালসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে এবং এরই অংশ হিসেবে আজ বৈঠকস্থল ঘেরাও ও হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছে।