ফুটপাতে হকার শুধু সন্ধ্যার পর
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/01/11/photo-1484136899.jpg)
যানজটমুক্ত ও রাস্তা জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত রাখতে সাপ্তাহিক কর্মদিবসে রাজধানীর কোথাও হকারদের বসতে দেবে না ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর হকাররা ফুটপাতে দোকানপাট নিয়ে বসতে পারবেন।
এ ছাড়া শুক্রবার হকাররা সারা দিনই ফুটপাতে ব্যবসার সুযোগ পাবেন। শনিবারও কোনো এলাকায় যদি সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ থাকে তাহলে সেদিনইও ফুটপাত থেকে হকারদের বিতাড়ন করবে না কর্তৃপক্ষ। তবে সিটি করপোরেশনের এ সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ফুটপাতের ছিন্নমূল ব্যবসায়ীরা।
আজ রোববার সিটি করপোরেশনের এ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘আগামী রোববার থেকে সাপ্তাহিক কর্মদিবসে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার আগে ফুটপাতে হকার বসতে দেওয়া হবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা ও মতিঝিল এলাকায় সাপ্তাহিক কর্মদিবসগুলোতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর থেকে হকাররা ফুটপাতে ব্যবসা করতে পারবেন।’
‘কিন্তু কর্মদিবসে দিনের বেলায় ফুটপাত ও রাস্তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে, কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না। জনগণের পথ চলাচলের রাস্তায় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর সব এলাকায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’, যোগ করেন মেয়র।
এ দিন মেয়র হকার্স পুনর্বাসন ও হলিডে মার্কেট চালু প্রসঙ্গে হকারদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় হকারদের নিয়ে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষের এসব ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
সাঈদ খোকন বলেন, সিটি করপোরেশন যে ছয়টি এলাকায় হলিডে মার্কেটের জন্য নির্ধারণ করেছে, সেগুলো সপ্তাহে একদিন চালু থাকবে। তবে যেসব হলিডে মার্কেট এলাকায় শনিবার দোকানপাট বন্ধ ও অফিস-আদালত বন্ধ থাকে, সেসব এলাকায় ওই দিন বসতে পারে কি না সে বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অফিস ছুটির দেড় ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে অবস্থানভেদে হকাররা ব্যবসা করতে পারবেন।
ডিএসসিসির যেসব এলাকা হলিডে মার্কেটের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হলো- মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে ফুটপাতের অংশ, দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার সাধারণ বিমা কার পার্কিং থেকে ইউনুস সেন্টার পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশের ফুটপাতের অংশ, বায়তুল মোকাররম লিংক রোড রাস্তার অংশ, জিপিওর দক্ষিণ পাশের ফুটপাতের অংশ, যাত্রাবাড়ী মোড় পার্কের সামনে ফুটপাত ও ধলপুর সিটি করপোরেশন স্টাফ কোয়ার্টার উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ফুটপাতের অংশ।
মেয়র সাঈদ খোকন জানান, এ সিদ্ধান্ত আগামী রোববার থেকে কার্যকর হবে। যদি কোনো হকার এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাহলে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী হাকিম তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সিটি করপোরেশনকে সহযোগিতা করবে।
মতবিনিময় সভায় হকার নেতারা তাঁদের নিজেদের মতামত তুলে ধরে বক্তব্য দেন। এ সময় তাঁরা জানান, হকারদের একটি পরিকল্পনা করে ওঠাতে হবে। যারা রাস্তার নিচে বা ওপরে বসে তাদের জন্য আলাদা আলাদা করে পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রশাসনের নাকের ডগায় রাস্তায় ওপর হকার বসলে তাদের জন্য হকারদের দায়ী করার পক্ষেও নন অনেক নেতা।
এসব ব্যাপারে মেয়র বলেন, লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এদের আইনের আওতায় আনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
মেয়র আরো বলেন, তালিকাভুক্ত হকারদের মধ্যে কেউ যদি ব্যবসা পরিবর্তন করে চাকরি করতে বা বিদেশ যেতে আগ্রহী হন এবং আবেদন করেন, সে ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন তাদের সহযোগিতা করবে। তালিকাভুক্ত হকারদের পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়ে সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নেবে বলেও জানান মেয়র।
বাসস জানায়, এ সময় ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর বখতিয়ারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও হকার্স নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সিটির করপোরেশনের এ ধরনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন ফুটপাতের অনেক ব্যবসায়ী। গুলিস্তানের অনেক হকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধু সন্ধ্যার পর ব্যবসা করতে দিলে পরিবার-পরিজন নিয়ে টিকে থাকা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।
আবার কয়েকজন হকার মনে করেন, যদি সিটি করপোরেশন এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তো করার কিছুই থাকবে না, হকারদের নির্দিষ্ট সময়েই বসতে হবে।