ঝিনাইগাতীতে পৌঁছায়নি সরকারি ত্রাণ
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের এক হাজার ২০০ হেক্টর জমির বোরো ধান এখনো পানির নিচে। উঠতি পাকা ও আধাপাকা ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
গত ২২ এপ্রিলের পাহাড়ি ঢলে মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের ফসল ও ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। ইউনিয়নের জুলগাঁও, চেঙ্গুরিয়া, বানিয়াপাড়া, ডাকুরপাড়, রাঙামাটিয়া, বাতিয়াগাঁও, হাসলী বাতিয়া ও হাসলীগাঁও এই আটটি গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঢলে।
প্লাবিত হওয়ার এক সপ্তাহের বেশি হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য বা ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর জন্য। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো খোঁজ-খবরও নেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে ওই ইউনিয়নে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য প্রশাসন থেকেও কোনো ধরনের খোঁজ-খবর নেয়নি।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কয়রোড পূর্বপাড়ার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের পাকা ধান সব পানির নিচে। তাঁরা কিছু ধান কাটার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ঘরে টাকা না থাকায় শ্রমিক নিতে পারেনি। যার ফলে নিজেরাই যতটুকু পেরেছেন কেটেছেন। তবে সিংহভাগ ধানই তাঁদের নষ্ট হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাঁদের কেউ দেখতে আসেনি, সাহায্য তো দূরের কথা।
মালিঝিকান্দা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কৃষকরা এমন অভিযোগ আমার কাছেও করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পূর্বপাড়ার কৃষকরা জানিয়েছেন, আমিই নাকি সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি তাঁদের দেখতে এসেছেন।’
এলাকার বৃদ্ধ বর্গাচাষি আবদুল হাকিম বলেন, ‘চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ছয় একর জমি আবাদ করেছি। সম্পূর্ণ ধান পানির নিচে। ধান পচে গেছে। এখন কী করে ঋণ পরিশোধ করব আর খাব বা কি?’ বৃদ্ধ ওই চাষি আরো বলেন, ‘আমার জীবনে এই এলাকায় এমন পানি হতে দেখি নাই।’
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোহাম্মদ আলী, মাসুদ মিয়া, আজিজুর রহমানসহ অনেকেই জানান, মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের আটটি গ্রামের মানুষ মূলত এই একটি ফসলের ওপর নির্ভর করেই তাদের জীবনযাপন করে। বিল এলাকার এই গ্রামগুলোতে এমন প্লাবিত হওয়ার ঘটনা স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আর ঘটেনি।
ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষক মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের বিলনির্ভর জুলগাঁও, চেঙ্গুরিয়া, বানিয়াপাড়া, ডাকুরপাড়, রাঙামাটিয়া, বাতিয়াগাঁও, হাসলী বাতিয়া ও হাসলীগাঁও এই আটটি গ্রামকে হাওরাঞ্চল হিসেবে ঘোষণার দাকি জানান। একই সঙ্গে মালিঝি নদীর ধারাবাতিয়া গুদারাঘাটে বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তাঁরা।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ জেড এম শরীফ হোসেন বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলের পানি অপেক্ষাকৃত উঁচু অঞ্চলগুলো থেকে নেমে পরে মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের ওই অংশটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে ওই এলাকায় এখনো স্বশরীরে যাওয়া হয়নি। তবে প্রতিটি এলাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ হলেই সে অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইউএনও আরো জানান, এরই মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যানুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা হয়েছে এবং আরো করা হবে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এরই মধ্যে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। জ্বর, আমাশয়জাতীয় রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে এলাকাবাসী। উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) খন্দকার আবদুল মান্নান জানান, ওই এলাকায় এখনো কোনো মেডিকেল টিম পাঠানো হয়নি। আর ওই এলাকা থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়ার মতো অভিযোগও আসেনি।