শেরপুরে হাতির ভয়ে ঘর ছাড়ছে এলাকাবাসী
জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ভারতীয় সীমান্তসংলগ্ন বন্য হাতি আক্রান্ত এলাকার মানুষ। গত এক সপ্তাহে দুটি হাতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বন বিভাগের কর্মকর্তারা স্থানীয়দের হাতি তাড়ানোর সরঞ্জাম জব্দ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এক দশক ধরে শেরপুরের তিন উপজেলার ভারতীয় সীমান্তসংলগ্ন গারো পাহাড় এলাকায় শতাধিক মানুষ হাতির আক্রমণে মারা গেছে। আহত হয়ে পঙ্গু হয়েছে আরো দুই শতাধিক মানুষ। অনেক জনবসতি বিলীন করে দিয়েছে ভারত থেকে আসা বন্য হাতির পাল। নষ্ট হয়েছে ক্ষেতের ধান, সবজি ও ফলের বাগান। নিজ ভিটামাটি ছেড়ে অনেককে চলে যেতে হচ্ছে অন্য জায়গায়। এমনকি ভিক্ষাবৃত্তিও বেছে নিয়েছেন অনেকে।
গত কয়েক বছর ধরেই হাতির তাণ্ডব থেকে জীবন বাঁচানোর দাবি জানিয়ে আসছে এসব এলাকার মানুষ। গত বছর জেলা থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে ঢাকাস্থ শেরপুরবাসীদের সংগঠন। কিন্তু তারপরও হাতির আক্রমণ থেকে স্থানীয়দের রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এরপর হাতি রক্ষার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করাসহ হাতিকে মারা যাবে না এমন প্রচার প্রচারণা করা হয়েছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় গত এক সপ্তাহে শ্রীবরদীর সীমান্ত এলাকায় দুটি হাতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বালিজুরি বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম মানুষের জীবনকে মৃত্যুর মুখে রেখে হাতি তাড়ানোর জিনিসপত্র, জেনারেটর ও তার জব্দ করেন।
এ ব্যাপারে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বন্য প্রাণী আইনে হাতি মারা যাবে না। তাই জেনারেটর ও তার জব্দ করে নিয়ে এসেছি।’
এদিকে হাতিকে সুরক্ষা দেওয়ার বিপরীতে মানুষকে অরক্ষিত করার এমন প্রক্রিয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে রানীশিমুল ইউনিয়নবাসী। গত বুধবার বিভাগীয় বন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বালিজুরি রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভের পরে হাতি ও মানুষের সহাবস্থান বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের সঙ্গে আলাপ করেছেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হাতি আলো দেখে ভয় পায়। এ জন্য এলাকাবাসী চাঁদা তুলে তেল কিনে জেনারেটরের মাধ্যমে রাতে আলো জ্বেলে রাখত। যাতে ঘরবাড়িতে হাতি আক্রমণ করতে না পারে। কিন্তু দুটি হাতির মৃত্যুতে কেন্দ্র করে বন বিভাগের লোকজন আমাদের জেনারেটর ও তার জব্দ করেছে। গত বছরও এই এলাকায় হাতির আক্রমণে মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এবার হাতি তাড়ানোর সরঞ্জাম জব্দ করায় যে কোনো সময় প্রাণ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে এলাকাবাসীর।