পুলিশের বাধায় খালেদা জিয়াকে দেখতে পারলেন না নেতাকর্মীরা
পুলিশের বাধার কারণে মৌলভীবাজারের শেরপুরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে একনজর দেখতে পারলেন না দলের নেতাকর্মীরা। সিলেট যাওয়ার পথে শেরপুর এলাকা অতিক্রম করার সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হতে চাইলে পুলিশ বেশ কয়েকটি স্থানে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে বাধা সৃষ্টি করে।
পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে যারা গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে শেরপুর পৌঁছান তাদেরকেও সড়কের পাশে দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ। সকাল থেকে শেরপুর যাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ করে পুলিশ তল্লাশি চালায়। নেতাকর্মীরা যেতে চাইলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী অভিযোগ করেছেন।
এদিকে শেরপুর ও বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির নয়জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সিলেট যাওয়ার পথে তাঁকে একনজর দেখতে ও অভ্যর্থনা জানাতে সোমবার সকাল থেকে দলের নেতাকর্মীরা শেরপুর যেতে চাইলে স্থানে স্থানে তল্লাশি চালিয়ে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে যারা শেরপুর পৌঁছান তাদেরকেও সড়কের পাশে দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ। শেরপুর চৌমুহনী মোড় কিংবা ওই এলাকার আশপাশের সড়কের পাশে নেতাকর্মী কিংবা পথচারীদেরও জড়ো হতে দেয়নি পুলিশ। অনেক দোকানপাটও বন্ধ করে দেয় পুলিশ, এমনটি অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সকাল থেকে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরকারবাজার ও শেরপুর মোড়ে অবস্থান নেন। তাদের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ওই এলাকায় মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে নেতাকর্মী বা পথচারীদেরও জড়ো হতে দেয়নি। জড়ো হলে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাড়িয়ে দেয়। ছিনিয়ে নেয় ব্যানার ও ফেস্টুন। তবে পুলিশের এমন বাধা প্রদানে নেতাকর্মীরা আশপাশের বাড়ি, দোকান ও বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শেরপুর এলাকায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর এসে পৌঁছায়। দূর থেকে গাড়ি বহর দেখে নেতাকর্মীরা পুলিশি বাধা অপেক্ষা করে শেরপুর মোড়ের আগেই সড়কের পাশে এসে হাত নেড়ে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর ওখান থেকে কয়েকটি গাড়িও ওই বহরের সঙ্গে যোগ দিয়ে সিলেটের পথে যাত্রা করে।
শেরপুরে পুলিশি বাধার কারণে নবীগঞ্জের দেবপাড়া এলাকা থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান নেতাকর্মীসহ কয়েকটি গাড়ি নিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়ে ওই বহরে যুক্ত হয়ে সিলেটের দিকে যাত্রা করেন।
গাড়িবহরে আরো যুক্ত হন জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক মোশারফ, আব্দুল মুকিত, সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভিপি মিজানুর রহমান মিজান, সাংগঠনিক সম্পাদক বকসী মিসবা উর রহমান, সদর উপজেলা সভাপতি হেলু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার জেলা আহ্বায়ক জাকির হোসেন উজ্জ্বল।
নেতাকর্মীরা জানান, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে একনজর দেখতে ও শুভেচ্ছা জানাতে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দুই পাশে দুই-তিন দিন আগ থেকে বিপুল জনসমাগমের প্রস্তুতি নেয় মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার আগমনকে ঘিরে জেলা ও উপজেলাসহ জেলার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনাও ছিল লক্ষ্যণীয়। স্থানীয় নেতাকর্মীরা আগে থেকে মৌলভীবাজার ও শেরপুর এলাকায় আসতে থাকেন। কিন্তু রোববার রাত থেকে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে নেতাকর্মীদের আটক করার অভিযোগ করেন তারা।
জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান জানান, দুই দিন আগে থেকে ওই এলাকার মহাসড়কে আশপাশে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন কিংবা তোরণ নির্মাণ করতে দেয়নি পুলিশ। রোববার রাতে ফেস্টুন লাগাতে গেলে ওখান থেকে তিনজন নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। আর খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে শেরপুরে আসা নেতাকর্মীদের মধ্যে সোমবার দুপুরে আটক করে আরো ছয়জনকে।
আটক নেতা-কর্মীরা হলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈয়দ ফয়সল আহম্মদ, সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. জুবের আহম্মদ, মনুমুখ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জিয়া মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ ইমরান সাজু, রাজনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুন্দর বখশ, টেংরা ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জগলুল আহমদ, কামরচাক ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি আলাল আহমদ, শ্রীমঙ্গল পৌর ছাত্রদল নেতা মাহফুজ, বাবলু ও সাবলু আহমদ।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুহেল আহম্মাদ রোববার রাতে তিনজনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সোমবার ছয়জন আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো কারা আটক হয়েছে, কতজন আটক হয়েছে, তারা বিএনপির নেতাকর্মী কিনা, তাদের থানা না নিয়ে এলে বলা যাচ্ছে না।
সিলেট পৌঁছার পর আজ সোমবার সন্ধ্যায় হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরানের (র.) মাজার জিয়ারত করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কাল তিনি ঢাকায় ফিরবেন।