ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন কামারুজ্জামানের
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করেন।
কামারুজ্জামানের আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায়ের বিষয়ে আমরা ৪৫ পৃষ্ঠার ৪৪টি যুক্তিতে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন দাখিল করেছি। আপিল বিভাগের রায়ে একজন বিচারপতি ভিন্নমত পোষণ করে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছিলেন। আমরা আশা করি, আমাদের এ যুক্তিগুলো গ্রহণ করে আদালত মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে ভিন্ন রায় দেবেন।’
আজ বৃহস্পতিবার কামারুজ্জামানের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের পর দুপুর সাড়ে ১২টায় সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন খন্দকার মাহাবুব হোসেন।
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাক্ষীদের সাক্ষ্য সঠিকভাবে গ্রহণ করা হয়নি। পুলিশের তদন্তের পর নতুন করে আরো তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এসব সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে বক্তব্য দিয়েছেন, ট্রাইব্যুনালে আবার ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। এ ছাড়া একবার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা আইনের পরিপন্থী। তাই আমরা আশা করি, আপিল বিভাগ আমাদের আবেদনগুলো সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে কামারুজ্জামানকে খালাস দেবেন।’
কামারুজ্জামানের এ আইনজীবী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের যে ঘটনায় কামারুজ্জামানকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছে, সে সময় তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর। এত কম বয়সী একজনের পক্ষে এত বড় একটি ঘটনা ঘটানো সম্ভব ছিল না।’ তিনি বলেন, একজন আইনজীবী কোনো খুন বা যুদ্ধাপরাধকে সমর্থন করেন না। কিন্তু আইন অনুযায়ী ব্যক্তিটি সঠিক বিচার পাচ্ছেন কি না, তা দেখেন একজন আইনজীবী।
গত বছরের ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি) সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর তিন বিচারক হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বেঞ্চের বিচারকরা সই করেন। পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়।
রায় প্রকাশের পর কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। লাল কাপড়ে মোড়ানো এ পরোয়ানার সঙ্গে কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপিও পাঠান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আসামিপক্ষের রিভিউ আবেদনের সুযোগ রয়েছে।
২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ওই বছরের ৬ জুন সাজা বাতিল করে খালাস চেয়ে কামারুজ্জামান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো আপিল দাখিল করেনি। আসামিপক্ষের শুনানির বিপরীতে বক্তব্য পেশ করে রাষ্ট্রপক্ষ। ট্রাইব্যুনালের দণ্ড বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।