শেষ আটের স্বপ্নপূরণ
স্বপ্ন সত্যি হলো শেষ পর্যন্ত। ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। অ্যাডিলেড ওভালে ২৭৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড অলআউট হয়ে গেছে ২৬০ রানে।
সোমবার বাংলাদেশের এই অবিস্মরণীয় জয় সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি, মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত ৮৯ রান, দারুণ বোলিংয়ে রুবেল হোসেনের চার উইকেট শিকার, বাউন্ডারি লাইনে সাকিব আল হাসানের চমৎকার ক্যাচ-যেন ‘দশে মিলে করি কাজে’র দুর্দান্ত নিদর্শন।
অষ্টম ওভারেই প্রথম সাফল্যে জয়ের সৌরভ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। মইন আলী (১৯) রানআউট হয়ে ফিরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে ৫৪ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন ইয়ান বেল ও অ্যালেক্স হেলস। ২০তম ওভারে ২৭ রান করা হেলসকে কট বিহাইন্ড করেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। এরপর ২৭তম ওভারে রুবেলের জোড়া শিকারে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ওই ওভারের প্রথম বলে ইয়ান বেলকে (৬৩) কট বিহাইন্ড করেন রুবেল। ওভারের চতুর্থ বলে ডিপ ফাইন লেগে ইংল্যান্ড অধিনায়ক ওয়েন মরগানের ক্যাচ দারুণ দক্ষতায় মুঠোবন্দী করেন সাকিব।
৩০তম ওভারে জেমস টেলরকে স্লিপে ইমরুল কায়েসের ক্যাচ বানিয়ে বাংলাদেশকে পঞ্চম সাফল্য এনে দেন তাসকিন আহমেদ। ৩৬তম ওভারে জো রুটকে কট বিহাইন্ড করে বাংলাদেশকে ষষ্ঠ সাফল্য এনে দেওয়ার কৃতিত্ব মাশরাফির।
এরপর দীর্ঘক্ষণ হতাশা। সপ্তম উইকেটে জস বাটলার আর ক্রিস ওকসের ৭৫ রানের জুটি ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ দলকে।
৪৬তম ওভারে বাটলারকে (৬৫) কট বিহাইন্ড করে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান তাসকিন। পরের বলেই ক্রিস জর্ডান রানআউট। তারপরও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন ওকস আর স্টুয়ার্ট ব্রড। এর মধ্যে লং অনে ওকসের সহজ ক্যাচ ফেলে স্নায়ুর চাপ বাড়িয়ে দেন তামিম ইকবাল।
শেষ পর্যন্ত সব দুশ্চিন্তা দূর করে দেন রুবেল। ৪৯তম ওভারের প্রথম ও তৃতীয় বলে ব্রড আর জেমস অ্যান্ডারসনের স্টাম্প এলোমেলো করে বাংলাদেশকে উল্লাসে ভাসিয়ে দেন রুবেল।
এর আগে বাংলাদেশের ইনিংস গড়ে উঠেছে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের ব্যাটিং দৃঢ়তায়। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করলেও মাত্র ১১ রানের জন্য তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি মুশফিক। তবে দুজনের দারুণ ব্যাটিং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাত উইকেটের ২৭৫ রানের ভালো সংগ্রহ এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে।
১৩৮ বলে সাতটি চার ও দুটি ছক্কায় মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে এসেছে ১০৩ রান। মুশফিকের ৭৭ বলে ৮৯ রানের আক্ষেপজাগানো ইনিংসে ছিল আটটি চার ও একটি ছক্কা। ৯৯ রানে চার উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেট জুটিতে দুজনের অবদান ১৪১ রান। বিশ্বকাপে এটাই বাংলাদেশের যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি। আগের সেরা জুটি ছিল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তামিম ইকবাল-মাহমুদউল্লাহর ১৩৯ রান।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬০ রান করে দুই উইকেটের নাটকীয় জয়ে দারুণ অবদান রাখা ইমরুল কায়েস এবার ব্যর্থ। এনামুল হকের চোটের কারণে বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাওয়া এই বাঁহাতি ওপেনার মাত্র দুই রান করে ইনিংসের প্রথম ওভারেই জেমস অ্যান্ডারসনের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন। নিজের পরের ওভারে তামিম ইকবালকেও আউট করেছেন অ্যান্ডারসন। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ৯৫ রান করা তামিমের রানও দুই এবং তিনিও ফিরেছেন স্লিপে ক্যাচ দিয়ে।
দলীয় ৮ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহর ৮৬ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। কিন্তু ২১ ও ২২তম ওভারে সৌম্য ও সাকিব আল হাসানের বিদায়ে আবার ফিরে আসে অস্বস্তি। প্রথমে ক্রিস জর্ডান কট বিহাইন্ড করেছেন ৪০ রান করা সৌম্যকে। মইন আলীর পরের ওভারে সাকিব ক্যাচ দিয়েছেন স্লিপে। দুই ওপেনারের মতো সাকিবের অবদানও দুই রান।
সাকিবের বিদায়ে চার উইকেটে ৯৯ রানের অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়লেও মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর দারুণ ব্যাটিং পৌনে ৩০০ রানে পৌঁছে দেয় বাংলাদেশকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৭৫/৭ (তামিম ২, ইমরুল ২, সৌম্য ৪০, মাহমুদউল্লাহ ১০৩, সাকিব ২, মুশফিক ৮৯, সাব্বির ১৪, মাশরাফি ৬*, সানি ৩*; অ্যান্ডারসন ২/৪৫, জর্ডান ২/৫৯, মইন ১/৪৪, ব্রড ১/৫২)
ইংল্যান্ড : ৪৮.৩ ওভারে ২৬০ (মইন ১৯, বেল ৬৩, হেলস ২৭, রুট ২৯, মরগান ০, টেলর ১, বাটলার ৬৫, ওকস ৪২*, জর্ডান ০, ব্রড ৯, অ্যান্ডারসন ০; রুবেল ৪/৫৩, মাশরাফি ২/৪৮, তাসকিন ২/৫৯)
ফল: বাংলাদেশ ১৫ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা : মাহমুদউল্লাহ।