রুলের শুনানি সোমবার পর্যন্ত মুলতবি
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করতে হাইকোর্টের জারি করা রুলের শুনানি আগামীকাল সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট। আজ দুপুরে বিচারপতি কামরুল ইসলাম ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের বেঞ্চে এই দিন ধার্য করা হয়।
এর আগে রুলের শুনানিতে এসবি, সিআইডি, র্যাব, ডিএমপি ও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পৃথক পৃথক প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রতিবেদনগুলো আদালতে উপস্থাপন করেন।
মেট্রোপলিট্ন পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়, সালাহ উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি। তবে আদালতের রুলের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
র্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, সালাহ উদ্দিন আহমেদ নামক কাউকে র্যাব হেফাজতে নেয়নি। একইভাবে সিআইডি, এসবি ও পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
শুনানির সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদনের অনুলিপি সালাহ উদ্দিন আহমেদের আইনজীবীদের না দেওয়ায় এবং হলফনামা আকারে আদালতে উপস্থাপন না করায় প্রতিবেদনগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সালাহ উদ্দিনের আইনজীবী ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ। তিনি আদালতকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবেদনগুলো হলফনামা আকারে দেয়নি বলে এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। তাই মামলার শুনানি আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হোক। আদালত তা আমলে নিয়ে শুনানি মুলতবি করেন। একই সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলকে এসব প্রতিবেদন হলফনামা আকারে দাখিলের নির্দেশ দেন।
সালাহ উদ্দিন আহমেদের অপর আইনজীবী বদরুদ্দোজা বাদল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা রুলের নিষ্পত্তি করে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করতে আদেশ চেয়েছি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবেদন দাখিল করেছে মর্মে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেছেন। তার কোনো অনুলিপি আমাদের প্রদান করেননি এবং হলফনামা আকারে জমা দেননি। এ জন্য আদালত আগামীকাল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলেছেন এবং এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।’
এর আগে সকাল ১০টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে প্রতিবেদনগুলো জমা দেওয়া হয়।
গত ১২ মার্চ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে কেন খুঁজে বের করা হবে না এবং রোববার তাঁকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ওই দিন দুপুরে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ। আবেদনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
ওই দিন আবেদনের শুনানিতে রুলের বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘পুলিশের আইজির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার বা আটক করেনি। রাজনীতিবিদরা নিজে পলাতক থেকে অনেক সময় রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লোটার জন্য এ ধরনের আচরণ করে থাকেন।’
উল্লেখ্য, ১০ মার্চ থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তাঁর পরিবার ও দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। তবে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আটক করা হয়নি বলে দাবি করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান চেয়ে ১১ মার্চ রাতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গুলশান ও উত্তরা পশ্চিম থানায় যান তাঁর স্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ। তবে কোনো থানাই তাঁর জিডি গ্রহণ করেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’ এমনকি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার মাসুদুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই।’
এ ঘটনার পরের দিন বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ কোথায় আছেন বা তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন কি না, তা পরিষ্কার নয়। তদন্তের পরই এ বিষয়ে স্পষ্ট বলা যাবে। ওই দিন মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজে সার্ক পুলিশ অফিসার ট্রেনিং কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন, এখন পর্যন্ত আমার কাছে বিষয়টা ক্লিয়ার (পরিষ্কার) নয়। আমাদের পাশে দেখেন আইজিপি সাহেবও আছেন। তিনি এবং আমি দুজনই বলছি, বিষয়টা আমাদের কাছে ক্লিয়ার নয়। তিনি কোথায় গিয়েছেন কিংবা কেউ নিয়ে গেছেন কিনা, বিষয়টি আমাদের কাছে এখনো ক্লিয়ার নয়। কাজেই একটু সময় লাগবে। তদন্ত করে দেখি বিষয়টা কী, জেনে নিই। তারপর আমরা জানাব।’