রেল দুর্ঘটনার কারণ গাছ!
বিভিন্ন সময়ে রেল দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রেললাইনের দুই ধারে রোপন করা গাছগুলোকেই দায়ী করেছে সংসদীয় কমিটি। তাই রেললাইনের আশপাশে যত্রতত্র গাছ না লাগিয়ে রেলওয়ের নির্দিষ্ট জমিতে গাছ রোপন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
আজ বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে দশম জাতীয় সংসদের ‘রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১২তম বৈঠকে বিষয়টি উঠে আসে। কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন।
কমিটি সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলো (এমওইউ) এবং তার অগ্রগতি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব জমিতে বিদ্যমান গাছ এবং পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগানো, রেল ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, লাভজনক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
বৈঠকে বলা হয়, সড়কপথে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরাও সঠিকভাবে ট্রেনের চলাচল লক্ষ করতে পারেন না। এতে দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া রেললাইন থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে গাছ না লাগানোর ফলে বৈশাখী ঝড় বা ঝড়ো বাতাসে রেললাইনের ওপর গাছপালা উপড়ে পড়ে রেল চলাচলে বিঘ্নের সৃষ্টি হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল প্রকৌশল বিভাগ থেকে জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি তুলে ধরে সামাজিক বন বিভাগকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও এ ব্যাপারে বন বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
বৈঠকে কমিটির সভাপতি সুপারিশ করে বলেছেন, রেললাইনের পাশে গাছ না লাগিয়ে রেলওয়ের যেসব জমি খালি পড়ে রয়েছে সেখানে যেন ফল ও ঔষধি গাছ লাগানো হয়।
তা ছাড়া রেললাইনের পাশে গাছ লাগানোকে নিরুৎসাহিত করার জন্য মহাপরিচালকের অনুমোদন ছাড়া গাছ লাগানো যাবে না, এই মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলী বলেন, আজকের বৈঠকের মূল এজেন্ডায় রেললাইলনের দুই ধারে গাছ লাগানোর কারণে ঘটা দুর্ঘটনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিটি যেখানে সেখানে গাছ না লাগিয়ে নির্দিষ্ট জমিতে লাগানোর সুপারিশ করেছে।
বৈঠকে জানানো হয়, রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে রেলপথ মন্ত্রণালয় ৪০টি এমওইউ সই করেছে এবং রেল ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, লাভজনক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে ২৭টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
এ ছাড়া বৈঠকে রেলওয়ে ভূমির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার স্বার্থে রেলের কী পরিমাণ জমি কতজনকে বৈধভাবে লিজ দেওয়া হয়েছে, তাদের সাথে কী চুক্তি ছিল, চুক্তি অনুযায়ী তা সঠিকভাবে পালন করা হয়েছে কি না, সেসব বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করে একটি সুস্পষ্ট প্রতিবেদন কমিটির কাছে জমা দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয় ।
এ ছাড়া রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের অবৈধ বিলবোর্ডগুলো আগামী এক মাসের মধ্যে উচ্ছেদ এবং রেলওয়ে একটি হেল্প লাইন চালু করার বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও সুপারিশ করা হয়।
কমিটির সদস্য ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, মো. মোসলেম উদ্দীন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মো. আলী আজগর, মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মোহাম্মদ নোমান, ইয়াসিন আলী ও ফাতেমা জোহরা রানী বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।