আফতাবের ক্রিকেট 'পাঠশালা'
চট্টগ্রম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তখন বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা চলছিল। স্টেডিয়ামের একেবারেই কোলঘেঁষে চট্টগ্রাম মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে তখন চলছিল জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার আফতাব আহমেদের ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্প। শতাধিক খুদে ক্রিকেটারকে নিয়ে চলছে তাঁর এই কার্যক্রম। নিজের নামেই করেছেন এই একাডেমি 'আফতাব আহমেদ ক্রিকেট একাডেমি'।
জাতীয় দলের একসময়ের অপরিহার্য এই ক্রিকেটার সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ২০১০ সালে। ঘরোয়া ক্রিকেটকেও বিদায় জানিয়েছেন বেশ কিছুদিন হয়েছে। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার টানে এবার ক্রিকেটার গড়ার কারিগর হিসেবে মাঠে নেমে পড়েছেন তিনি।
মূলত গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় আফতাবের একাডেমির কার্যক্রম। সমাজের বিভিন্ন স্তরের খুদে ক্রিকেটাররা তাঁর এই পাঠশালার ছাত্র। যাদের নিয়ে চলছে সপ্তাহে চারদিনের প্রশিক্ষণ। মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠ ও নাসিরাবাদ বয়েজ স্কুল মাঠে পালা করেই চলছে এই কার্যক্রম।
মাত্র পাঁচ মাসের প্রশিক্ষণে বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান ক্রিকেটারের খোঁজ পেয়েছেন আফতাব। যারা হয়তো একদিন জাতীয় দলেও প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। আফতাব বললেন, 'আমার এই একাডেমিতে মূলত আসছে একেবারেই অপরিপক্ব ক্রিকেটাররা। যারা হয়তো ক্রিকেটের কোনো নিয়ম কানুনই জানে না। তারপরও বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান ক্রিকেটারের খোঁজ পেয়েছি। যাদের ঠিকভাবে পরিচর্যা করলে একদিন হয়তো ভালো কিছু করতে পারে, খেলতে পারে জাতীয় দলেও।'
এর জন্য নিজের উদহারণও টেনেছেন জাতীয় দলের একসময়ের হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান, 'আমি যদি চট্টগ্রাম থেকে এবং চট্টগ্রামে প্র্যাকটিস করে জাতীয় দলে সুযোগ পেতে পারি, তাহলে এরা কেন পারবে না। অবশ্যই এদের পক্ষেও ভালো কিছু করা সম্ভব। এদের মধ্য থেকেই হয়তো একদিন নান্নু-আকরামদের খোঁজ পাওয়া যাবে।'
যদিও একসময় জাতীয় দলে থাকত চট্টগ্রামের ক্রিকেটারদের আধিক্য। এখন মাত্র একজন তামিম ইকবাল। শুধু জাতীয় দলেই নয়, চট্টগ্রামে থেকে খুব বেশি ক্রিকেটার উঠে আসছে না যারা প্রিমিয়ার লিগ অথবা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। বিষয়টা পীড়া দেয় আফতাবকে। আর এই কারণেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই একাডেমি গঠন করেছেন এই ডান-হাতি ব্যাটসম্যান।
চট্টগ্রাম থেকে নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করতে হলে আফতাব আহমেদের একার পক্ষে সম্ভব নয়, সবার সমষ্টিগত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। এ কথা বললেন তিনিও, 'চট্টগ্রাম ক্রিকেটের এখন যে অবস্থা- তা আমাদের জন্য খুবই লজ্জার। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এখান মাত্র তিন-চারজন ক্রিকেটার খেলছেন। আর জাতীয় দলে মাত্র একজন। অথচ একসময় জাতীয় দলে চট্টগ্রামের ক্রিকেটারদের আধিক্য ছিল। প্রিমিয়ার লিগেও বেশ কিছু ক্রিকেটার খেলেছেন।'
চট্টগ্রামের ক্রিকেটকে এই দুর্দশা থেকে বের করে আনতে শুধু একাডেমি করেই থেমে থাকেননি। একেবারেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে এবং নাসিরাবাদ বয়েজ স্কুল মাঠে একটি করে উইকেট তৈরি করেছেন। আনিয়েছেন একটি বোলিং মেশিনও। এর প্রসার বাড়াতে এখন প্রয়োজন কিছু স্পন্সরের। তাহলেই হয়তো আরো ভালো কিছু করা সম্ভব হবে।
কয়েকটি স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথাও বলেছেন আফতাব। আশা করছেন তিনি সাড়া পাবেন, 'আসলে পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানকেই এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। কিছু স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাদের সহযোগিতা পেলে আশা করছি আমার এই প্রতিষ্ঠানকে আরো বড় পরিসরে নিতে পারব।'