ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/07/30/photo-1438193392.jpg)
উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি সামান্য উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর এবং ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ (KOMEN)-এ পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সব সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর এবং পায়রা ও মংলা সব সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। আগামীকাল দুপুরের পর বরিশাল-চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। উপকূলীয় এলাকায় তিন থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। উপকূলীয় এলাকা থেকে জনসাধারণকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছে জেলা প্রশাসন।
বুধবার রাত ১২টার দিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ বুধবার রাত ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৫ কিলোমিটার পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল (২১ দশমিক ৭ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ)। এটি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর বা বিকেল নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
পূর্বাভাসে আরো বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা জেলা এবং এসব স্থানের নিকটবর্তী সব দ্বীপ ও চর ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এদের নিটকবর্তী সব দ্বীপ ও চর ৫ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং তাদের নিকটর্তী সব দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা জেলা এবং এদের নিকটর্তী সব দ্বীপ ও চরে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার এবং সমুদ্রগামী সব জাহাজকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এনটিভির মংলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সেখানকার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারি হওয়ার পরই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ড ও ছয়টি ইউনিয়নের সব ওয়ার্ডে মাইকিংয়ের মাধ্যমে জনসাধারণকে সতর্ক করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। রাত সাড়ে ৯টা থেকে সুন্দরবনসংলগ্ন মংলার জয়মণি এলাকায় সতর্কাবস্থায় থাকার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। সব সাইক্লোন শেল্টার ও বহুতল ভবনবিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর ও সুন্দরবনে মাছ ধরতে যাওয়া প্রায় ২০ হাজার জেলে দুবলার চরসহ আশপাশের চর ও নদী-খালে আশ্রয় নিয়েছেন। সাগর-সুন্দরবনে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে সহায়তা করছে র্যাব ও কোস্টগার্ড।
এনটিভির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় মাইকিং করে জনসাধারণকে সচেতন করা হচ্ছে। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সায়েদ মোহাম্মদ মঞ্জুর আলম বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছে। যেকোনো ক্ষতি মোকাবিলায় আড়াই হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে আবহাওয়ার সতর্কতার জন্য লাল পতাকা ওড়ানো হয়েছে ।
এনটিভির পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুয়াকাটায় সাগরসংলগ্ন বাসিন্দাদের সাইক্লোন শেল্টারে নেওয়া হয়েছে। উপকূলজুড়ে মাইকিং জোরদার করা হয়েছে। সব মাছ ধরার ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে মহিপুর ও আলীপুর খালে অবস্থান করছে। ৫ নম্বর সতর্কবার্তার জন্য উপকূলজুড়ে তিনটি করে পতাকা ওড়ানো হয়েছে। সাগর মোহনার রাঙ্গাবালী উপজেলাজুড়ে মসজিদ থেকে মাইকিং করে সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বেড়িবাঁধবিহীন চর আন্ডার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। সাগর ও নদীমুখে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে প্রবেশ করা পানিবন্দি কলাপাড়ার লালুয়া, সুধীরপুরসহ ১০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কলাপাড়া ও কুয়াকাটায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই। উপকূলীয় উপজেলা কলাপাড়া, গলাচিপায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকার জানান, বিচ্ছিন্ন চর এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারি কর্মকর্তাদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।