ফরিদপুরে অতি খরায় পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা
ফরিদপুরের পাট দেশ ও বিদেশে প্রচুর সুনাম থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে চলা তীব্র তাপদাহ ও অনাবৃষ্টিতে সেই পাটের সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে। তীব্র তাপদাহ ও অনাবৃষ্টিতে চৌচির ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানের পাটক্ষেত। বৈশাখের তপ্ত রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে পাটগাছ। এতে পাটের আবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে কৃষকের এবং জেলায়।
ধারাবাহিক তীব্র তাপদাহের কারণে নেমে গেছে পানির স্তর। পাটের জমিতে ঘন ঘন সেচ দেওয়ায় যেমন বাড়ছে উৎপাদন খরচ, তেমনি প্রচণ্ড খরায় জমির আগাছা পরিষ্কার করতে পারছে না কৃষকরা। এতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে দেখা গেছে, অনাবৃষ্টির কারণে পাটক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও পাটগাছ শুকিয়ে বিবর্ণ ও পাতা কুঁচকে গেছে। এ অবস্থায় অনেক কৃষক নষ্ট হওয়া পাটক্ষেতে নিড়ানি দিচ্ছে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় মোট পাট আবাদের লক্ষ্য ৮৬ হাজার ২০৬ হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত চাষিরা ৮৩ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন। জেলার নয় উপজেলার মধ্যে বোয়ালমারী, নগরকান্দা, সালথা, মধুখালী, ফরিদপুর সদর ও ভাঙ্গা উপজেলাতে বেশি পাটের আবাদ হয়।
জেলার সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের কয়েকটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পাটচাষিরা দিনরাত জমির যত্ন নিচ্ছে। কিন্তু তীব্র গরমে পাট বেড়ে উঠতে পারছে না। পাট বাঁচাতে অনেকেই শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিচ্ছে।
সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের কৃষক নাসের হোসেনসহ কয়েকজন জানান, এমন খরা আগে দেখেননি। এই খরা পাটের ব্যাপক ক্ষতি করছে। গত বছর পাটের ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর কয়েক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। অনাবৃষ্টির কারণে এবার ঘন ঘন সেচ দিতে হচ্ছে। এর পরও পাটগাছ বাড়ছে না। পাটগাছের বৃদ্ধি দ্রুত না হওয়ায় জমিতে আগাছার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে।
মধুখালী উপজেলার পাটচাষি আশুতোষ বিশ্বাস জানান, খরার কারণে পাট গজাচ্ছে না। কেউ কেউ জমিতে সেচ দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে খরচ অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে।
জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. হযরত আলী বলেন, ‘গত বর্ষার পর থেকেই ফরিদপুরে কোনো বৃষ্টির দেখা নেই। জমি শুকনা থাকার পরও কৃষক জমিতে পাট লাগিয়েছে। অনেকে তপ্ত রোদে পাটের জমিতে সেচ দিচ্ছে। এতে কৃষকের খরচ প্রচুর বেড়ে যাচ্ছে। এই মহূর্তে যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে অনেক খেতে পাট লাগানো হলেও সেই পাট গাছ আর বড় হবে না। সেই জন্য যেসব কৃষকদের পাট গাছ এমন ক্ষতির মুখে পড়বে তাদের পরামর্শ দেওয়া হবে আমন ধান লাগানোর জন্য জমিতে। কারণ প্রতিটি জিনিসের একটি সময় থাকে, সেই সময় চলে গেলে তখন অন্য উপযুক্ত পদ্ধতির ব্যবহার করায় ভালো হবে। কারণ প্রকৃতির উপর তো আমাদের কারো হাত নেই।’