বান্দরবানে দুদিনে ডায়রিয়ায় ৭ জনের মৃত্যু
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার করুকপাতা ইউনিয়নে তিনটি পাড়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার ও আজ সোমবার এ দুদিনে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আজ ঘটনাস্থলে দুটি মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
মৃতরা হলেন মেনলিও ইয়ংচা পাড়ার বাসিন্দা রামধন ম্রো, খাইচাং ম্রো, থুংলাক ম্রো, সোনাদি পাড়ার জনরুন ত্রিপুরা এবং মাংলুম পাড়ার মাংধন ম্রো, রেংচং ম্রো, চিংরে ম্রো।
স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয়রা জানায়, জেলার আলীকদম উপজেলার করুকপাতা ইউনিয়নের দুর্গম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ম্রো জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ইয়ংচা পাড়া, মেনলিও পাড়া, সোনাদি পাড়া, মেনরুং পাড়া, কচ্ছপিয়া পাড়া, আলিশ্যাপা পড়া, রুইথং পাড়া, তংরিং পাড়া এবং মাংলুম পাড়াসহ পার্শ্ববর্তী ১০টি পাহাড়ি গ্রামে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট এবং প্রচণ্ড গরমে প্রায় এক সপ্তাহেরও অধিক সময় ধরে ছড়িয়েপড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে শিশু, কিশোর ও বয়স্ক দুশতাধিকের বেশি।
অসুস্থদের মধ্যে আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে সাতজনকে। গতকাল রোববার এবং আজ সোমবার দুদিনে পাড়াগুলোতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
করুকপাতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ক্রাতপু ম্রো বলেন, ‘তিনটি পাড়ায় ডায়রিয়ায় এরই মধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ডায়রিয়া প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়া ইউনিয়নের ১০টি পাড়ায় আক্রান্ত হয়েছে দুশতাধিকেরও বেশি মানুষ।’
ক্রাতপু ম্রো বলেন, ‘ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার খবরে গতকাল রোববার এবং আজ ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের দুটি মেডিকেল টিম। এছাড়াও সেনাবাহিনীর দুটি মেডিকেল টিমও ঘটনাস্থলে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা হেলিকপ্টারে মেডিকেল টিমের কাছে প্রয়োজনীয় জরুরি ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং খাবার স্যালাইন পাঠিয়েছি আক্রান্ত এলাকাগুলোতে।’
পার্বত্য জেলা পরিষদ বান্দরবানের সদস্য ম্রো গবেষক সিইয়ং ম্রো জানান, ম্রো জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত করুকপাতা ইউনিয়নে প্রচণ্ড গরম এবং বৃষ্টিতে ছড়া-খালের দূষিত হওয়া পানি ব্যবহারের ফলে ব্যাপকভাবে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। ডায়রিয়ায় এরই মধ্যে সাতজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সেনাবাহিনীর একাধিক মেডিকেল টিম পৌঁছেছে।
বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. অংসুই প্রু মারমা জানান, প্রচণ্ড গরম এবং দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে দূর্গম পাহাড়গুলোতে এই মৌসুমি ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। করুকপাতা ইউনিয়নে বেশকয়েকটি পাহাড়ি গ্রামে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সাতজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তবে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা কত সেটি এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে গেছে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সেনাবাহিনীর চারটি মেডিকেল টিম। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে আশা করি।’