যাঁরা পরী মণিকে দেখতে এসেছেন, দেখে চলে যান : আদালত
রাজধানীর বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে হওয়া মামলায় চিত্রনায়িকা পরী মণিকে জামিন ও রিমান্ড শুনানির জন্য হাজির করলে শতাধিক সাধারণ আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা বিচারকক্ষে ভিড় করেন। কানায় কানায় পূর্ণ বিচারকক্ষে হইচই ও শোরগোল শুরু হয়।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু সবাইকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘যাদের এই কোর্টে মামলার শুনানি নেই, তারা দয়া করে বের হয়ে যান। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।’
এরপরেও কোনো আইনজীবী বের না হওয়ায় বিচারক আতিকুর রহমান বলেন, ‘আপনারা যাঁরা উনাকে (পরী মণিকে) দেখতে এসেছেন, তাঁরা দেখে চলে যান। আপনারা ভিড় কমান, অন্যথায় শুনানি সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এরপরেও কোনো সাধারণ আইনজীবী কোর্ট রুম থেকে বের হননি। বেশিরভাগ আইনজীবী পরী মণিকে দেখার জন্য কোর্ট রুমে অবস্থান করতে থাকেন। প্রায় ২০ মিনিট ধরে ভিড় কমানোর চেষ্টা করা হলেও কেউ বের হননি। পরে আদালত বলেন, ‘সবাই নীরব থাকুন, শুনানির জন্য সহযোগিতা করুন। পরে ১১টা ৪৮ মিনিটে শুনানি শুরু হয়।’
রাজধানীর বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হওয়া মামলায় অভিনেত্রী পরী মণির জামিন ও রিমান্ড শুনানির জন্য আজ বৃহস্পতিবার আদালতের এজলাসে হাজির করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমানের আদালতে বেলা সাড়ে ১১টায় শুনানি শুরু হয়। এ সময় পরী মণির পাশে পুলিশকে কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
পরী মণিকে দেখতে আদালতে এজলাসে ভিড় জমায় উৎসুক জনতা। এ সময় বিচারক বলেন, ‘যাঁরা পরী মণিকে দেখতে এসেছেন, দেখা শেষ হলে আদালতের এজলাস ছেড়ে চলে যান।’
এর আগে আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পরী মণিকে হাজির করা হয়। এর আগে গতকাল পরী মণিকে আবারও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
পরী মণির আইনজীবী মজিবুর রহমান জানিয়েছিলেন, আজ পরী মণির জামিন ও রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত শুক্রবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে পরী মণিকে সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা।
গত ৪ আগস্ট পরী মণিকে তাঁর বনানীর বাসা থেকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অভিযানে নতুন মাদক এলএসডি, মদ ও আইস উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করে র্যাব। তাঁর ড্রয়িংরুমের কাবার্ড, শোকেস, ডাইনিংরুম এবং বেডরুমের সাইড টেবিল ও টয়লেট থেকে বিপুল মদের বোতল উদ্ধার করা হয় বলেও দাবি করা হয়। এরপর রাত ৮টা ১০ মিনিটে পরী মণিকে তাঁর বাসা থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে গাড়িটি কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দপ্তরে পৌঁছায়। সেখানে রাত ১২টা পর্যন্ত পরী মণিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরদিন ৫ আগস্ট বিকেল ৫টা ১২ মিনিটে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পরী মণি, প্রযোজক ও অভিনেতা মো. নজরুল ইসলাম রাজ ও তাঁদের দুই সহযোগীকে নিয়ে কালো একটি মাইক্রোবাসে করে বনানী থানায় রওনা দেয় র্যাবের একটি দল।
এরপর র্যাব বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় পরী মণি ও তাঁর সহযোগী দীপুর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে৷ রাত ৮টা ২৪ মিনিটে পরী মণি ও তাঁর সহযোগীকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বনানী থানার মামলায় তাঁদের সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ সময় আসামিপক্ষে তাঁদের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাঁদের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরপর ১০ আগস্ট পরী মণি ও তাঁর সহযোগী দীপুকে আদালতে হাজিরের পর ফের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাঁদের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দুই দফায় রিমান্ড শেষে গত ১৩ আগস্ট পরী মণি ও তাঁর সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাঁদের জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।