ইব্রাহিম রায়িসি ইরানে যে পরিবর্তন আনবেন
টানা ১৯ ঘণ্টার দীর্ঘ ভোট শেষে ইরানে ভোট গণনা শুরু হয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে ইরানের ১৩তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি। যিনি কট্টরপন্থী শিবিরে অন্যতম প্রার্থী ছিলেন।
এবারের নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৫ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার ৩০৭ জন। এর মাঝে ২ কোটি ৮৬ লাখ ভোটার ভোট প্রদান করেন। যেটি শতাংশ হিসেবে মোট ভোটারের ৪৮.৮ শতাংশ মানুষ অংশ নিয়েছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনার ফলাফলে দেখা যায়, নির্বাচনের অন্যতম প্রার্থী সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি পেয়েছেন ১ কোটি ৭৮ লাখ ভোট (৬১ দশমিক ৯৫ শতাংশ)। ওনার নিকটতম মোহসেন রেজায়ী পেয়েছেন ৩৪ লাখ ১২ হাজার ৭১২ ভোট। এ ছাড়া তৃতীয় অবস্থানে থাকা আবদুল নাসের হেমাতি ২৪ লাখ ২৭ হাজার ২০১ ভোট এবং চতুর্থ স্থানে থাকা আমির হোসেইন কাজিজাদেহ পেয়েছেন ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭১৮ ভোট পান।
এর আগে ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে সাতজন প্রার্থী অনুমোদন পান, কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনজন প্রার্থী মেহের আলীজাদে, আলীরেজা যাকানি ও সাইদ জালিলি অন্যদের সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এর ফলে নির্বাচনের মাঠে ৪ জন প্রার্থীর মাঝে লড়াই হয়।
এমন বিজয়ের ফলাফলের পরেই সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসিকে শুভেচ্ছা জানাতে ওনার অফিসে উপস্থিত হন ইরানের দুই মেয়াদে থাকা প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানী। এ ছাড়া ওনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোহসেন রেজায়ী, আবদুন নাসের হেমাতি ও আমির হোসেইন কাজিজাদেহ হাশেমি।
সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি, উত্তর-পূর্ব ইরানের মাশহাদ শহরে ১৯৬০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ২০ বছর বয়সেই তিনি রাজধানী তেহরানের পাশের শহর কারাজ শহরের প্রসিকিউটর জেনারেলের দায়িত্ব পান। কয়েক দশকের বিচারকার্যে অভিজ্ঞ রায়িসি ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তেহরানের প্রসিকিউটর জেনারেল, ২০০৪ সাল পর্যন্ত জুডিশিয়াল অথরিটির ডেপুটি চিফ ও ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় প্রসিকিউটর জেনারেল হিসেবে কাজ করেন।
উনি গত বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ইরানের বিচার বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পান। বিচার বিভাগে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ওনার অবস্থান জনগণকে ওনার পক্ষে ভোট দিতে আগ্রহী করে তোলে। অন্যদিকে, ধর্মীয়ভাবে অনেক পরিচিত মুখ হওয়ায় সবার কাছেই পরিচিত ছিলেন তিনি। যা ওনার নির্বাচনে বিজয়ে ভূমিকা রেখেছে বলা যায়।
নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতেও উনি বলেছিলেন, দুর্নীতি দমনে পদক্ষেপ, দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণ, পরমাণু চুক্তিতে ফেরা এবং যুব বেকারত্ব কমানো—এ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেবেন। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের ইরানের প্রতি যে অবরোধ অব্যাহত আছে, বিশেষ করে ২০১৫ সালে বিশ্বের ছয়টি পরাশক্তির সঙ্গে করা ইরানের যে পরমাণু চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেরিয়ে গেলে ইরানের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের অবরোধ আরও জোরালো হয়।
এমন সব অবরোধের মুখে সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি ওনার দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করে ইরানকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সচেষ্ট হবেন, তা সময়ই বলে দেবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, ডক্টর অব মেডিসিন, ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান