পরিবেশ
ঈদের খুশি ধরে রাখতে চাই পরবর্তী সতর্কতা
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে বহু কাঙ্ক্ষিত খুশির প্রহর। প্রতিবছর বহু প্রতীক্ষিত ঈদকে ঘিরে মানুষের মনে ছড়িয়ে পড়ে খুশির বার্তা। কিন্তু আমাদের সামান্য অসতর্কতা ঈদের পরবর্তী দিনগুলোকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। ঈদ আসার অনেক আগে থেকেই শুরু হয় ঈদের প্রস্তুতি। ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদের যে প্রস্তুতি থাকে, তা থেকে একেবারে ভিন্ন প্রস্তুতি চলে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদে। পশু কোরবানিকে কেন্দ্র করে এই ঈদে থাকে বিশেষ আয়োজন। পশু জবাই করে রক্ত অপসারণ, চামড়া পৃথক করা ও বর্জ্য ফেলার দিকে আমরা অনেকেই হয়ে পড়ি উদাসীন। কেবল মাংস কেটে বিতরণ করার মধ্যমেই কর্তব্য শেষ বলে আমরা ধরে নিই। কিন্তু এই সামান্য উদাসীনতা ঈদের পরবর্তী দিনগুলোকে করে তোলে দুর্বিষহ। বিশেষ করে নগরাঞ্চলে এই কোরবানির বর্জ্যের কারণে জনজীবনে নেমে আসে দুর্ভোগ। যেখানে সেখানে ফেলে রাখা গোবরের গাদা, নাড়িভুঁড়ি, আবর্জনা, রক্ত ইত্যাদির স্তূপ পচে-গলে সৃষ্টি হয় অসহনীয় দুর্গন্ধ। রাস্তার পাশে স্তূপীকৃত বর্জ্যে পথচলা ভীষণ দায় হয়ে পড়ে। অনেক সময় বর্জ্যের কারণে বন্ধ হয়ে যায় এলাকার পানিপ্রবাহের ড্রেন, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। আবর্জনা পচে সৃষ্টি হয় উৎকট গন্ধ। সব মিলিয়ে পরিবেশ হয়ে পড়ে চলাচলের অযোগ্য। একদিনের সামান্য অসচেতনতা আমাদের ঈদের খুশিকে একদিকে যেমন ক্ষণস্থায়ী করে তোলে, তেমনি অন্যদিকে নষ্ট করে পরিবেশ। অথচ আমাদের একটু সতর্কতাই পারে আমাদের পরবর্তী দিনগুলোতেও ঈদের খুশি ধরে রাখতে। বাংলাদেশ সরকার ঈদের সময় সব এলাকাতেই কমবেশি বাড়তি পরিচ্ছন্নতার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়।
প্রতিবছর ঈদের কারণে সৃষ্ট আবর্জনা দ্রুত অপসারণের জন্য নেওয়া হয় বাড়তি পদক্ষেপ। প্রতিটি জনবহুল এলাকায় নিয়োগ করা হয় অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী। কিন্তু একা সরকারের পক্ষে এই ঈদ-পরবর্তী নোংরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কষ্টসাধ্য বিষয়। যদি সাধারণ জনগণ নিজ দায়িত্বে অন্তত নিজের বাড়ির কোরবানির বর্জ্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে অপসারণ করে, তবে সরকার ও জনগণের মিলিত চেষ্টায় এ কাজ খুব সহজে সমাধান হতে পারে। কোরবানির বর্জ্য অপসারণের কিছু সহজ নিয়ম সবারই জানা উচিত ও যথাযথভাবে পালন করা উচিত।
এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় কোরবানিতে পশুর উচ্ছিষ্টাংশ পরিবেশবান্ধব উপায়ে অপসারণের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে দুই লাখ লিফলেট বিতরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সারা দেশে জেলা প্রশাসনের ও জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে এ লিফলেট বিতরণ করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জেলা পর্যায়ে প্রতিটি মসজিদে ইমাম সাহেব ঈদের পূর্বের জুমায় ও খুতবায় এ বিষয়ে সবাইকে অবহিত করেন। সব ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায়ও এই লিফলেট ও জনসচেতনতা বিষয়ে বিশেষ প্রচারকাজ চালানো হয়।
ঢাকা সিটি করপোরেশনকে পরিষ্কার রাখতে সিটি করপোরেশন ওয়ার্ড কমিশনারদের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য চটের ব্যাগ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মাইকিং, স্টিকার ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া যাতে যত্রতত্র পশু কোরবানির কারণে পরিবেশ দূষিত না হয়, সেদিক বিবেচনা করে রাজধানীর নির্দিষ্ট স্থান পশু কোরবানির জন্য নির্ধারণ করা হয়। ঢাকা শহরে মোট নির্বাচন করা হয় ৫৩৫টি স্থান। এর ভিত্তিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩২৮টি স্থান ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২০৮টি স্থান নির্বাচন করা হয়। এ ছাড়া ঈদের দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব পশুর হাট ও করপোরেশনের এলাকা থেকে বর্জ্য অপসারণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। যদি জনগণ এই কাজে যথাযথ সহায়তা প্রদান করে, তবে এর মাধ্যমে নাগরিকের পরিচ্ছন্ন, জীবাণুমুক্ত, জলাবদ্ধতামুক্ত রাখা সহজ হবে।
এবারের ঈদ সামনে রেখে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হয়। এগুলোর বাস্তবায়ন হলে ঈদ-পরবর্তী ঢাকা নগরী আর কষ্টের কারণ হয়ে উঠবে না। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে এসব পদক্ষেপ কার্যকর করা সম্ভব নয়, যদি না সাধারণ মানুষ সচেতন হয়ে তাদের সহায়তা করে। পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। পবিত্র ঈদের খুশিকে বজায় রাখতে ও ঈদ-পরবর্তী অনাকাঙ্ক্ষিত দূষিত পরিবেশ থেকে রেহাই পেতে আমাদের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। তাই সরকারকে সহায়তা করে ও নিজে সচেতন থেকেই ঈদের খুশিকে আমরা বর্ধিত করতে পারি।
লেখক : শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।