বিশ্বকাপ ক্রিকেট
বাংলাদেশের জন্য প্রায় নকআউট!
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। টার্গেটের বাইরে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শুরুটা দলকে দারুণ চাঙ্গা করে। এমনকি প্রথম ম্যাচের মোমেন্টামে জিতে যেতে পারত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও। তৃতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হার নয় শুধু, মনোবলও বড় ধাক্কা খায়। ১১ জুন এই কলামে লিখেছিলাম, 'আজ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ'। বাংলাদেশ একটা বাড়তি জয় নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করতে পারছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে যে আশায় ভাসছিল বাংলাদেশ, ব্রিস্টলে বৃষ্টি তা প্রায় ডুবিয়ে দিয়েছে।
শ্রীলঙ্কা আমাদের টার্গেটে ছিল। এবারের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার যা পারফরম্যান্স, তাতে বাংলাদেশের জয়টা ছিল অবধারিত। এমন জেতা ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগিটা দুর্ভাগ্যজনক। সেই বৃষ্টি বাংলাদেশের সেমিফাইনাল স্বপ্ন কঠিন করে দিয়েছে। নকআউট পর্ব শুরুর আগে হঠাৎ বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য প্রায় নকআউট হয়ে গেছে। সেমিফাইনালের আশা জিইয়ে রাখতে হলে আজ বাংলাদেশকে জিততেই হবে, ডু অর ডাই। আসলে বাংলাদেশকে সম্ভব হলে বাকি পাঁচটা ম্যাচই জিততে হবে, অন্তত চারটি ম্যাচ জিতলেও হিসাব-নিকাশে থাকতে পারবে। তবে কাজটা কঠিন। কারণ প্রতিপক্ষ দলগুলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তান। কাজটা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। বাংলাদেশকে ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোতে হবে। আর কোনো ভুল করা যাবে না। প্রথম ম্যাচের মতো বাংলাদেশকে সব পরিকল্পনা মাঠে নিখুঁত অনুবাদ করতে হবে।
সেমিফাইনালে যেতে হলে আরো পাঁচ মহাসাগর পাড়ি দিতে হবে। তবে বাংলাদেশকে এগোতে হবে ম্যাচ বাই ম্যাচ। আজকের ম্যাচটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আমাদের প্রিয় প্রতিপক্ষ। গত ৯ ম্যাচের ৭টিতে জিতেছে বাংলাদেশে। সর্বশেষ মোকাবিলা আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে। সৌম্য আর মোসাদ্দেকের দুরন্ত ব্যাটিংয়ে উড়ন্ত জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই জয়ের স্মৃতি আজ এগিয়ে রাখবে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশের জন্য বড় স্বস্তি, সবাই সুস্থ আছেন। সাকিব তৈরি তাঁর ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়ার মিশনে। অনুশীলনে চোট পাওয়া মুশফিকও তৈরি। বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচে নিজেকে খুঁজে তামিম ইকবাল তো ফর্মে ফিরবেনই। সেটা কি আজই? সৌম্যর ঝড় চাই, তবে সেটা আরো লম্বা হতে হবে। সাকিব-মুশফিক জানেন তাঁদের কাজটা, করছেনও। পাঁচে আমি মাহমুদুল্লাহকে চাই। গত বিশ্বকাপে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল্লাহ এবার নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না। প্রথম ম্যাচে ৩৩ বলে ৪৬ করা মাহমুদুল্লাহকে পরের দুই ম্যাচে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেট হয়ে আউট হয়েছেন। প্রথম ম্যাচের মতো ফিনিশার মাহমুদুল্লাহকে চাই। মিঠুনের বদলে ইনফর্ম লিটন দাসকে চাই দলে। আগের একাধিক লেখায় দলে পরিবর্তনের কথা বলেছিলাম। বৃষ্টি না এলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই পরিবর্তন আসত। আজও একাদশে বদল আসার সম্ভাবনা আছে। সবাই রুবেলের কথা বলছেন। রুবেল কার জায়গায় খেলবেন? ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরাজ খুব কার্যকর। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মোসাদ্দেককে বাদ দেওয়ার সুযোগ কম। আমি দেখছি সাইফউদ্দিনের জায়গায়ই শুধু রুবেল ঢুকতে পারে। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলিংটাই একটু দুর্বল। মুস্তাফিজকে ফর্মে চাই। আর চির ফাইটার মাশরাফি নিশ্চয়ই সমালোচকদের মুখ বন্ধ করবেন পারফরম্যান্স দিয়েই।
ব্যাটিং করার সময় প্রথম ১০ ওভার দেখেশুনে ক্যারিবীয় পেসারদের সামলাতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার খুবই আনপ্রেডিক্টেবল। কোনো ধারাবাহিকতা নেই। তাদের অনেক বিগ হিটার আছে বটে, কিন্তু আমি ভয় পাই না।
টনটনের ছোট মাঠ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিগ হিটাররা এই মাঠে ঝড় তুলবেন না তো। আমি বরং উল্টা করে ভাবতে চাই। ক্যারিবীয়রা বড় মাঠেও ছক্কা মারতে পারে। তাই ছোট মাঠেও পারবে। দুই ছক্কায় কিন্তু সমান রান। ৬৬ মিটারের ছক্কায়ও ছয় রান, ৯৯ মিটারের ছক্কায়ও। বরং বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের যেসব শট চার হতো, সেটাও ছয় হতে পারে। তাই ছোট মাঠ বরং বাংলাদেশের জন্য শাপে বর হতে পারে।
আজকের ম্যাচের জয় নিয়ে আমার কোনো সংশয় নেই। টনটনের ছোট মাঠ থেকেই নতুন করে শুরু হবে বাংলাদেশের বড় স্বপ্নযাত্রা।
লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।