বাংলাদেশের চামড়াশিল্প নিয়ে ইতালিতে সেমিনার
রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ইতালির ট্যানারি শিল্পাঞ্চল সান্তা ক্রোসে বাংলাদেশের চামড়াশিল্পে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে গত মঙ্গলবার এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় চেম্বার ভবনে ওই সেমিনারে দুই শহরের মেয়র, চামড়াশিল্পের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ এবং উদ্যোক্তাসহ প্রায় ২৫ জন উপস্থিত ছিলেন।
এতে বাংলাদেশের চামড়াশিল্প নিয়ে বিস্তারিত উপস্থাপনার পাশাপাশি বাংলাদেশ-ইতালির যৌথ সম্ভাবনার কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদারের সভাপতিত্বে সেমিনারে সান্তা ক্রোস শহরের মেয়র জুলিয়া ডেইডা, কাসতেল ফ্রাংকো ডি সত্তো শহরের মেয়র গাব্রিয়েলো টটি, ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ড. গ্লিওছি এবং পিসা চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি লাউরা গ্রানাতা বক্তব্য দেন।
ফ্লোরেন্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের অনারারি কনসাল অ্যাডভোকেট জর্জিয়া গ্রানাতা স্বাগত বক্তব্য দেন। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) রাজীব ত্রিপুরা।
দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত করার ক্ষেত্রে পরস্পরকে জানা খুবই জরুরি উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত প্রথমে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের অবহিত করেন। এরপর উন্নত সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৪১ এবং গত ১০ বছরে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। ইতালির প্রযুক্তি খুবই উন্নতমানের উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের চামড়াশিল্প উন্নয়নে ইতালিকে কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার অনুরোধ জানান।
সেমিনারে দূতাবাসের অর্থনৈতিক কাউন্সেলর মানস মিত্র পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে বাংলাদেশের চামড়াশিল্পের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। তিনি বিদেশি বিনোয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং প্রণোদনা বিষয়েও বিস্তারিত জানান।
সান্তা ক্রোস শহরের মেয়র জুলিয়া ডেইডা তাঁদের ট্যানারি ভিলেজ সম্পর্কে বলেন, ছয়টি সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এ অঞ্চলে ছোট-বড় প্রায় ৫০০ কারখানায় সমগ্র ইতালির ৩৫ শতাংশ চামড়াজাত পণ্য উৎপন্ন হয়। পরিবেশগত ভারসাম্য এবং পণ্যের গুণগতমান বজায় রেখে নামীদামি ব্র্যান্ডের চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করা হয়।
এ শিল্প নিয়ে গবেষণা এবং সুদক্ষ ও আধুনিক জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে ইউনিভার্সিটি অব পিসাসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে বলে জুলিয়া ডেইডা উল্লেখ করেন।
ট্যানারি ভিলেজের পরিবেশগত মান বজায় রাখতে আধুনিক প্রযুক্তিতে পানি পরিশোধনাগার এবং চামড়াশিল্পে ব্যবহৃত কেমিক্যাল কারখানাসহ বেশকিছু স্থাপনা রয়েছে বলেও মেয়র জানান।
এই ট্যানারি ভিলেজের সঙ্গে বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্পের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে সেমিনারে আলোচনা হয়। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশকে উন্নতমানের কারিগরি সহযোগিতা এবং ডিজাইন ল্যাব স্থাপন নিয়ে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়।
ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ড. গ্লিওছি কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেন। এ ক্ষেত্রে একটি সমঝোতা স্মারক সই করা যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সেমিনারের পরে রাষ্ট্রদূত একটি পানি পরিশোধন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তাতে ট্যানারি শিল্পে ব্যবহৃত ময়লা পানি পরিশোধন করা হয়। কেন্দ্রের পরিচালক রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদারকে পানি পরিশোধনের বিভিন্ন পর্যায় ব্যাখ্যা করেন।
শিল্প ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস ধারাবাহিকভাবে ইতালির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে এ ধরনের সেমিনার আয়োজন করছে।