সৌদিতে নতুন ‘কাফালা ব্যবস্থা’ কার্যকরের খবরে আনন্দিত প্রবাসীরা

সৌদি আরবের প্রবাসী কর্মীদের জন্য বড় সুখবর নিয়ে এসেছে দেশটির শ্রম ব্যবস্থার যুগান্তকারী পরিবর্তন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এখন থেকে প্রবাসী কর্মীরা তাদের নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়াই চাকরি পরিবর্তন করার স্বাধীনতা ও একই সঙ্গে সৌদি আরবে প্রবেশ ও বের হওয়ার স্বাধীনতা পাবেন। খবর গালফ নিউজের।
আল আরাবিয়া সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দেশটির বিতর্কিত ‘কাফালা’ স্পনসরশিপ সিস্টেমের এই উন্নত সংস্কারগুলো স্থানীয় সময় গত রোববার (১৯ অক্টোবর) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৌদি প্রবাসী মীর মনির এনটিভি অনলাইনকে জানান, এই ব্যবস্থা পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশি শ্রমিকদের হয়রানি কমে যাবে, আগে যেমন ছুটি চাইলেই সহজে পাওয়া যেত না এখন চাইলে ছুটি মিলবে। এছাড়া ভিসা জটিলতায় আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দেশে আসতে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল সেটাও দূর হবে।
সৌদি প্রবাসী মো. নাঈম ভূঁইয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এটা নিয়ে সৌদিতে আলোচনা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি এটা এখনো কার্যকর হয়নি। যদি কার্যকর হয় তাহলে আমাদের জন্য অনেক বেশি উপকার হবে। আমার (সৌদি প্রবাসীরা) চাইলেই সহজে আগের কফিলের অধীনে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তার অনুমতি ছাড়া অন্য জায়গায় কাজ করার সুযোগ পাবো, চাইলে ছুটিতে বাড়ি (দেশে) যেতে পারবো।
সৌদি আরবে প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছিল (যা ১৯৫০ সালে জিসিসি দেশগুলোতে শুরু হয়েছিল) কাফালা ব্যবস্থা। এই নিয়মের কারণে প্রবাসী কর্মীরা তাদের নিয়োগকর্তা বা স্পন্সরের কাছে এক রকম আটকা থাকতেন। কারণ, নিয়োগকর্তাই ছিলেন কর্মীদের ভিসা ও সেখানে থাকার আইনি সবকিছুর জন্য দায়বদ্ধ।
সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের নতুন শর্তাবলির অধীনে, প্রবাসী কর্মীদের জন্য নিম্নলিখিত মূল পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে :
চাকরি পরিবর্তন : প্রবাসী কর্মীরা তাদের কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আগের নিয়োগকর্তার অনুমোদন ছাড়াই অন্য চাকরিতে যেতে পারবেন। এমনকি চুক্তির মেয়াদকালেও নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ ও নোটিশের সময়সীমা মেনে চলার শর্তে তারা অন্য জায়গায় স্থানান্তর হতে পারবেন।
ভ্রমণের স্বাধীনতা (এক্সিট পারমিট বাতিল) : প্রবাসী কর্মীরা এখন আবেদন জমা দেওয়ার পরে নিয়োগকর্তার কাছে শুধু একটি অনলাইন বিজ্ঞপ্তিসহ পূর্ব অনুমতি ছাড়াই সৌদি আরবের বাইরে ভ্রমণ করতে পারবেন।
চূড়ান্ত প্রস্থান : একটি ‘চূড়ান্ত প্রস্থান’ শর্ত একজন অভিবাসী কর্মীকে তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই চলে যেতে দেবে, যার জন্য নিয়োগকর্তার সম্মতির প্রয়োজন ছাড়াই একটি অনলাইন বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হবে।

‘কাফালা ব্যবস্থা’ বাতিলের উদ্দেশ্য
সৌদি আরবের মানবসম্পদবিষয়ক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন নাসের আবুথুনাইন গত নভেম্বরে বলেছিলেন, এই ব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রধান লক্ষ্য হলো সৌদি শ্রমবাজারকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা।
উপমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা একটি আকর্ষণীয় শ্রমবাজার তৈরি ও বেসরকারি খাতে সমস্ত বিদেশি কর্মীদের জন্য তিনটি প্রধান পরিষেবার মাধ্যমে কর্মপরিবেশ উন্নত করার লক্ষ্য রাখি।
বর্তমানে কুয়েত, ওমান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কাফালা ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। তবে সৌদি আরবের এই সংস্কার সেখানকার প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।