রিয়াদে শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শহীদ শেখ কামাল ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে আধুনিক ক্রীড়া ও সংস্কৃতি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের যুব সমাজকে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করে একটি আধুনিক উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন।
সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী গত ৫ আগস্ট শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, শেখ কামাল ছিলেন একজন সৃজনশীল উদ্যমী প্রাণবন্ত তরুণ, যিনি মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন, একজন সংগঠক হিসেবে ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন, সংগীত, নাটক, সংস্কৃতিতে ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে তরুণদের নেতৃত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন, তাঁর জীবন ও কর্ম নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। শেখ কামালের মতো এমন বহুমুখী দেশদরদী উদ্যমী সৃষ্টিশীল প্রতিভার মানুষের স্বপ্ন হারিয়ে যেতে পারে না। তিনি যুব সমাজকে শেখ কামালের জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচির পাশাপাশি সমাজ সতেনতায় উদ্বুদ্ধকরণে মঞ্চ নাটক আন্দোলনে শেখ কামাল ছিলেন প্রথম সারির সংগঠক। তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচণ্ড উৎসাহ ছিল তাঁর। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। সে সময়ের জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীরও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি।
জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ছয় দফা ও ১১ দফা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শেখ কামাল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতের দেরাদুনে মূর্তি ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। শেখ কামাল ছিলেন ৬১ জন সৌভাগ্যবান তরুণদের একজন যারা বাংলাদেশ ফার্স্ট ওয়ার কোর্স সমাপন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। দেশে ফিরে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর এডিসির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ঘাতকের বুলেট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ঘাতকরা চেয়েছিল বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করতে। সেজন্য তারা শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেল কাউকেই রেহাই দেয়নি। সেদিন জাতির পিতার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় ঘাতকের বুলেট তাদের স্পর্শ করতে পারেনি।
জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, শেখ কামালের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ ক্রীড়াক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে ভিশন ২০৪১ গ্রহণ করা হয়েছে।
দূতাবাসের প্রথম সচিব (প্রেস) মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল মাত্র ২২ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছেন। যতদিন বেঁচে ছিলেন কেবল ছুটেছেন নতুন সৃষ্টির নেশায়। রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, ক্রীড়া, সংস্কৃতি সব অঙ্গনে দাগ কেটেছেন শেখ কামাল। একজন আধুনিক মনের মানুষ শেখ কামাল যুব সমাজের আদর্শ মডেল।
দূতাবাসের মিনিস্টার ও কার্যালয় প্রধান ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদের সঞ্চালনায় দূতাবাসের ডিফেন্স অ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ সিদ্দিকী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী অফিসারদের মধ্যে শেখ কামাল ছিলেন অত্যন্ত চৌকস ও মেধাবী। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তরুণ যুবকেরা শেখ কামালের আদর্শ ধারণ করে দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করলে শেখ কামালের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শেখ কামালের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের সব শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।
সৌদি সরকারের করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আরোপিত বিধি-নিষেধ অনুসরণ করে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।