হজে গরমজনিত অসুস্থতা কমেছে ৯০ শতাংশ

এবারের হজ মৌসুমে প্রথমবারের মতো গরমজনিত অসুস্থতা ৯০ শতাংশ কমে এসেছে বলে জানিয়েছে সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই বছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ২৩০ জন মুসলমান সফলভাবে পবিত্র হজ পালন করেছেন, যার মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ আন্তর্জাতিক হজযাত্রী ছিলেন।
শুক্রবার (৬ জুন) সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এমন অসাধারণ সাফল্যের পেছনে রয়েছে পূর্ব পরিকল্পিত জনস্বাস্থ্য পদক্ষেপ এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে নিবিড় সমন্বয়। তারা জানান, এবারের হজে ছায়াযুক্ত স্থানের পরিমাণ অনেক বাড়ানো হয়েছে, মুসল্লিদের মাঝে ঠান্ডা রাখার সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ভাষায় সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে—যা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়া থেকে মুসল্লিদের রক্ষা করেছে।
হজের প্রধান স্থানগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছিল প্রশিক্ষিত চিকিৎসা দল ও জরুরি সেবা ইউনিট। এতে কোনো বড় দুর্ঘটনা ছাড়াই ধর্মীয় আচার সম্পন্ন করতে পেরেছেন হাজিরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানায়, এই সফলতা সৌদি ভিশন ২০৩০-এর অংশ হিসেবে পরিচালিত ‘স্বাস্থ্য খাত রূপান্তর কর্মসূচি’ ও ‘হজযাত্রী অভিজ্ঞতা উন্নয়ন কর্মসূচি’-র প্রত্যক্ষ ফল।
গত বছর প্রচণ্ড গরমে হাজার হাজার হজযাত্রী হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন, যা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবারের বিপরীত চিত্রই প্রমাণ করে—দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিলে বিপদ অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, "আমাদের প্রচেষ্টা হজযাত্রীদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ইবাদতের সুযোগ করে দিয়েছে।"
সৌদি পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে হজ পালন করেছেন মোট ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ২৩০ জন। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৬ হাজার ৫৭৬ জন এসেছেন বিদেশ থেকে এবং এক লাখ ৬৬ হাজার ৬৫৪ জন ছিলেন সৌদি আরবের নাগরিক ও বাসিন্দা। সব মিলিয়ে পুরুষ হজযাত্রী ছিলেন আট লাখ ৭৭ হাজার ৮৪১ জন এবং নারী হজযাত্রী সাত লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৯ জন। আন্তর্জাতিক হজযাত্রীদের মধ্যে ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৭ জন এসেছেন আকাশপথে, ৬৬ হাজার ৪৬৫ জন সড়কপথে এবং ৫ হাজার ৯৪ জন জন সমুদ্রপথে।
এই পরিসংখ্যান সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে, যা অত্যন্ত সঠিক ও নির্ভরযোগ্য বলে উল্লেখ করেছে পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ইবাদত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় প্রশান্তি প্রকাশ করেছেন অনেকে। মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে সৌদি আরবের যে আন্তরিকতা ও দক্ষতা এবার দেখা গেল, তা ভবিষ্যতের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।