সৌদি আরবে করোনায় তিন বাংলাদেশির মৃত্যু
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সৌদি আরবের মদিনায় তিন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এঁদের মধ্যে একজন চিকিৎসক রয়েছেন।
মৃত তিনজন হলেন ডা. আফাক হোসেন (৫৮), মোহাম্মদ হাসান (৩৮) ও কুরবান আলী (৫৪)। জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের আইন সহকারী মুমিনুল ইসলাম তাঁদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, ডা. আফাক হোসেন দুই দশক ধরে মদিনায় সাফা আল-মদিনা ক্লিনিকে কর্মরত ছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মদিনার একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। তাঁর গ্রামের বাড়ি যশোর জেলায়। তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের সাবেক ছাত্র। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন তিনি। ডা. আফাক ছিলেন ওই মেডিকেলের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
একই সময় মঙ্গলবার সকালে মদিনার একটি সরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মোহাম্মদ হাসান। তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চাকফিরানী দুর্লভের পাড়ার লিয়াকত আলীর ছেলে।
মোহাম্মদ হাসানের ছোট ভাই মোহাম্মদ হেলাল মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমার বড় ভাই মদিনার আল তাইবা মার্কেটে কাজ করতেন। করোনাভাইরাসের কারণে মার্কেট বন্ধ থাকায় তিনি মদিনা থেকে একটু দূরে তাঁর বন্ধুর খামারে বেড়াতে যান। সেখানে গেলে সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ভর্তির তিন দিন পর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর সৌদি সরকারের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছয় দিন থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার ভাই মারা যান বলে খবর পাই।’
বড়হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) মো. জুনায়েদ জানান, মদিনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া হাসানরা চার ভাই ও চার বোন। ভাইদের মধ্যে সবার বড় হাসান প্রায় দেড় বছর আগে দেশে এসেছিলেন। ব্যক্তিজীবনে বিবাহিত হাসান তিনটি ছেলেসন্তানের জনক।
এদিকে, হাসানের মৃত্যুর সংবাদ জানাজানি হলে পরিবারের সদস্যদের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। নেমে আসে শোকের ছায়া। তাঁদের গগনবিদারী আহাজারিতে প্রতিবেশীরা জড়ো হয়ে বারবার সান্ত্বনা দেন।
এর আগে গত ২৪ মার্চ রাত ৮টার দিকে মদিনার আল জাহরা হাসপাতালে কুরবান আলী নামের এক বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি মদিনার সোলায়মান ফাহাদ কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে গেলে তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। হাসপাতালে মৃত্যুর পর গত সোমবার হাসপাতাল থেকে এ বিষয়ে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটকে জানানো হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে জেদ্দা কনস্যুলেট উইং একটি চিঠি পাঠিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করেছে। বাংলাদেশ কনস্যুলেট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
কুরবানের বাড়ি ঢাকার সাভার উপজেলার নগর কোন্ডার সাদাপুর পুরান বাড়ি এলাকায়। তাঁর বাবার নাম রেজাউল করিম।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বার্তা সংস্থা বিএনও নিউজের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৬৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১০ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৬৫ জন।