ভার্জিনিয়ায় ‘তাসের দেশ’ মঞ্চস্থ
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতিনাট্য ‘তাসের দেশ’-এর অনবদ্য পরিবেশনায় মঞ্চ মাতিয়েছে বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট বিসিসিডিআই বাংলা স্কুলের খুদে শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ভার্জিনিয়ার আর্লিটনে কেনমোর মিডল স্কুলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৭তম উপহার বাংলাদেশ মেলা। বিসিসিডিআই বাংলা স্কুলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই ২৭তম উপহার বাংলাদেশ মেলার বাংলা স্কুলের খুদে শিক্ষার্থীদের মনমাতানো নাচে-গানে পরিবেশিত হয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতিনাট্য ‘তাসের দেশ’। বাংলা স্কুল ড্যান্স একাডেমির কোরিওগ্রাফিতে গীতিনাট্যের পরিচালনায় ছিলেন মুক্তা বড়ুয়া এবং সার্বিক নির্দেশনায় ছিলেন শামীম চৌধুরী।
খেয়ালি স্বভাবের এক রাজপুত্র। অস্থির ও চঞ্চল প্রকৃতির রাজপুত্রের মধ্যে নেই কোনো নিয়মের বালাই। হঠাৎ মনে হলো রাজ্য ছেড়ে অন্য কোথাও যাবেন। ঠিক যেই ভাবা, সেই কাজ। সঙ্গীকে নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে রাজপুত্র পৌঁছলেন নিয়মের রাজ্য ‘তাসের দেশে’। যেখানে নিয়মনীতি ছাড়া কিছুই চলে না। অথচ রাজপুত্রের আগমনে ঘটল নিয়মের ব্যত্যয়ে।
তাদের দ্বারা প্রভাবিত হলো তাসের দেশের অনেকেই। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজসভাও, ডাকা হলো বৈঠক। সবাই নিয়মের পক্ষে থাকলেও ‘তাসের দেশে’র রানি চলে গেলেন রাজপুত্রের পক্ষে। এমনই ব্যঙ্গ বিদ্রূপে রচিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতিনাট্য ‘তাসের দেশে’ নিয়ে ২৭তম উপহার বাংলাদেশ মেলার মঞ্চে হাজির হয়েছিল স্কুলের শিক্ষার্থীরা। অনবদ্য পরিবেশনায় মুগ্ধ হয়েছে উপস্থিত দর্শকরা।
আমেরিকায় থেকেও দেশি সংস্কৃতির চর্চা করাটা নিঃসন্দেহে অনেক কষ্টসাধ্য একটি বিষয়। যেখানে রক, পপ আর ওয়েস্টার্ন মিউজিকের অপসংস্কৃতিতে ডুবে থাকার কথা, সেখানে শিকড়কে ধরে রাখা আর শিকড়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকাটা চেতনা ও দেশপ্রেমের বিষয়। বাঙালিদের বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। আর রবীন্দ্রনাথ ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়েই দেশের মঞ্চ কাঁপিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের বাংলা স্কুলের খুদে শিল্পীরা। কবিগুরুর ‘তাসের দেশ’-এর মঞ্চায়নে দেশের প্রতি ও রবীন্দ্রনাথের প্রতি গভীর মমত্ত্ববোধই তুলে ধরেছিলেন বিসিসিডিআই ও বাংলা স্কুলের শিল্পীরা।
সমাজের তৈরি কঠিন বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে পড়ে যান্ত্রিক হয়ে যায় মানুষ, হারিয়ে ফেলে তাদের নিজস্ব বোধশক্তি। কী করে নতুন ও তারুণ্যের উদ্দীপনা তাদের এই বন্দিত্ব থেকে মুক্তি এনে দেয়, তারই ব্যঙ্গাত্মক প্রকাশ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তাসের দেশ’। নৃত্যনাট্যের অভিনয়শিল্পীরা হলেন দর্পণ, নোরা, অংকিতা, তানিশা, লাবিবা, ইসরা, সাবরিনা, হৃদিতা, জেসিকা নাজিলা, অদ্রিজা, অরিত্রি, অনুভা, ইয়াশা, মরিয়ম শুসান্তিকা, রানীতা, অহনা অনিটা, নায়লা, তাসনুভা, অবন্তিকা, নাইমা, অনুশা ও বাংলা স্কুলের ড্যান্স একাডেমির খুদে শিক্ষার্থীরা। তাসের দেশ পরিবেশনার আগে বাংলা স্কুল মিউজিক একাডেমির শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করে। এই পর্বে বাঁশিতে সংগত করেন মোহাম্মদ মজিদ, গিটার মোহাম্মদ হুদা অনু, মন্দিরায় জয় দত্ত বড়ুয়া, ঢোল হিমু রোজারীও, অক্টোপ্যাড আরিফুর রহমান স্বপন, তবলায় ওস্তাদ আশীষ বড়ুয়া ও ভায়োলিনে ছিলেন দিবিয়া ও পরাগ। অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন শিক্ষক ওস্তাদ নাসের চৌধুরী।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বাংলা স্কুলের প্রিন্সিপাল ও শিক্ষক শামীম চৌধুরী, বাংলা শিক্ষক আতীয়া মাহজাবীন, বাংলা শিক্ষক তানিয়া খান, বাংলা ও পালি ভাষার শিক্ষক নিভা বড়ুয়া, বাংলা ও আরবিবিষয়ক শিক্ষক ফারজানা সুলতানা, সংস্কৃতি ও বাংলা শিক্ষক জয়িতা দাসগুপ্ত, মিউজিক একাডেমির পরিচালক নাসের চৌধুরী ও ড্যান্স একাডেমির পরচিালক মুক্তা বড়ুয়াকে তাঁদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
এ ছাড়া অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন অনুষ্ঠানের গ্র্যান্ড স্পন্সর মোহাম্মদ হুদা, গোল্ড স্পন্সর আনিস খান ও সিলভার স্পন্সর দিলাল আহমেদ। কমিউনিটিকে বিশেষ সেবা প্রদানের জন্য অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন অ্যান্থনি পিয়ুস গোমেজ, হিরা খান, তাসলিম হাসান, বোরহান আহমেদ, রেদওয়ান চৌধুরী ও কামরুল ইসলাম কামাল।