ওয়াশিংটনে বাংলা স্কুলের বিজয় মেলা ও পৌষ পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত
আমেরিকার ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (বিসিসিডিআই) বাংলা স্কুলের আয়োজনে বিজয় মেলা ও পৌষ পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। লাখো শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গতকাল শনিবার ভার্জিনিয়ার নোভা আনানডেল ক্যাম্পাসে ছোট শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের চিত্রাঙ্কনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিজয় মেলার অনুষ্ঠান। একই সাথে শুরু হয় পৌষ পিঠা উৎসব।
বৃহত্তর ওয়াশিংটনের শত শত প্রবাসী বাংলাদেশির পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। একদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত বিজয় উৎসব, অন্যদিকে দেশীয় পিঠাপুলির মৌ মৌ গন্ধ আর বাংলা স্কুলের ছোট শিশুদের মুক্তির চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা দেখে মুগ্ধ হয় অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পাশাপাশি শুরু হয় পিঠা প্রতিযোগিতার বিচার পর্ব। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিচার পর্ব পরিচালনা করেন সোনালী সোহানা, সুনীল শুকলা ও সামিনা আমিন। পিঠা প্রতিযোগিতায় বিচারপর্ব পরিচালনা করেন বুশরা ওয়াহিদ, ড. তুহীন ও নাসিমা খান পপি।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শেষে মূলমঞ্চের সামনে শুরু হয় শিশুদের অংশগ্রহণে যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সজ্জিত হয়ে শিশুরা কেউ মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী, চাষি, সৈনিক, ফেরিওয়ালা, গ্রামের বধূ ইত্যাদি সাজে সজ্জিত হয়ে অংশগ্রহণ করে। যেমন খুশি তেমন সাজো বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন ওয়াহিদ হোসাইনী, হিরন চৌধুরী ও মোজহারুল হক।
শিশুদের অংশগ্রহণে যেমন খুশি তেমন সাজো অনুষ্ঠানের পর পরই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে প্রবাসের বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিরা। এর পরই অনুষ্ঠানের মূলমঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শুরুতেই হাজারো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। বাংলা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সাথে অনুষ্ঠানে আগত শত শত অতিথির কণ্ঠে ভেসে ওঠে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভলোবাসি। চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাশ...’। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের পর পরই বাংলা স্কুলের খুদে শিল্পীরা আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে।
জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন শেষে শুরু হয় দলীয় সঙ্গীত। বিজয়ের গানে কাব্যগীতি শিরোনামে অনুষ্ঠিত এই পর্বের নির্দেশনায় ছিলেন বাংলা স্কুলের গানের ওস্তাদ নাসের চৌধুরী এবং গ্রন্থনায় ছিলেন আতীয়া মাহজাবীন নিতু। এই পর্বে অংশগ্রহণ করেন সুমু, শিখাম ঊর্মিলা, অদিতি, নীতু, নিভা, নাসিমা, বুলবুলি, কামাল, স্বরোজ, জেসমিন, উজ্জ্বল, শাহিদা মেরিনা ও সঞ্জয়। এই পর্বে তবলায় সঙ্গত করেন আশীষ বড়ুয়া, মন্দীরায় জয় এবং গিটারে ছিলেন অনু।
দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন শেষে বাংলা স্কুল মিউজিক একাডেমির পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় গান ও নৃত্যানুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানের মুল মঞ্চে নৃত্য পরিবেশনা শেষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কার বিতরণ শেষে ধন্যবাদ জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিসিসিডিআই সাধারণ সম্পাদক শিমুল সাহা। এরপর মঞ্চে আসে ওয়াশিংটনের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল শ্যাডো ড্রিম। প্রায় মধ্যরাতে বিসিসিডিআই বাংলা স্কুলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিজয় মেলা ও পৌষ পিঠা উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
বিসিসিডিআই নুতন বোর্ড গঠিত : বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট বিসিসিডিআইয়ের দুই বছর মেয়াদি নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। নয় সদস্যবিশিষ্ট এই নতুন বোর্ডে সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন আতিয়া মাহজাবীন নীতু, সহ সভাপতি নাজিব আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক শিমুল সাহা, সহ সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবেদীন, কোষাধ্যক্ষ তাসলিম হাসান, শিক্ষা বিষয়ক পরিচালক নিভা বড়ুয়া, প্রেস ও পাবলিকেশন পরিচালক জয়িতা দাসগুপ্তা, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া পরিচালক আইরিন আক্তার এবং প্রোগ্রাম পরিচালক মোহাম্মদ জসিম।
বিসিসিডিআই বাংলাস্কুলে আর্থীক সহায়তায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন নব নির্বাচিত সভাপতি আতিয়া মাহজাবীন। বাংলা স্কুলের একটি নিজস্ব ভবন নির্মাণে আর্থিক সহায়তা নিয়ে প্রবাসী সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আগামী দুই বছরে আমাদের নুতন বোর্ডের লক্ষ্য বিসিসিডিআই বাংলা স্কুলের জন্য একটি স্থায়ী ভবন তৈরি করা যেখানে আমাদের নুতন প্রজন্ম বাংলা আর বাঙালির ভাষা সংস্কৃতির চর্চা করবে।’