বঙ্গবন্ধু বইমেলায় শিশুদের অন্য রকম একটি দিন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী এবং বাংলাদেশের ইতিহাস জানার মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কপ্রবাসী বাংলাদেশি শিশুরা অন্য রকম একটি দিনই কাটাল। গতকাল রোববার সকালে মা-বাবার হাত ধরে জ্যাকসন হাইটসের পিএস ৬৯ স্কুলে আসে শিশু-কিশোররা। এই স্কুলেই বঙ্গবন্ধু বইমেলা ২০১৯-এর আয়োজন করে মুজিববর্ষ উদযাপন পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র।
নিউইয়র্কের খ্যাতিমান চিকিৎসক ফেরদৌস খন্দকারের উদ্যোগে শিশুদের জন্য ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করা হয়। এতে প্রথমে বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে ইংরেজি ভাষায় নির্মিত একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। সাংবাদিক ও লেখক শামীম আল আমিনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে তথ্যচিত্রটি পরিচালনা করেন ডা. ফেরদৌস খন্দকার। এতে কণ্ঠ দেন বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী রাহাত মুকতাদির।
এরপরই শিশুদের সামনে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন বক্তারা। এরপর সেসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শিশুরা কুইজে অংশ নেয়। ছিল চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। পুরো আয়োজনে বিপুলসংখ্যক শিশু-কিশোর অংশ নেয়। পরে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন।
মঞ্জুর কাদেরের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেলাল বেগ, কৌশিক আহমেদ, ডা. ফেরদৌস খন্দকার, শামীম আল আমিন, মিশুক সেলিম, শিবলী সাদিক শিবলু, টিপু আলম, খালেদ শরফুদ্দিন, আবু সায়ীদ রতন, শামস চৌধুরী রুশো ও ইশতিয়াক রুপু।
এ সময় লেখক আনিসুল হক বলেন, ‘প্রবাসে এটি সত্যিই ব্যতিক্রমী একটি আয়োজন। শিশুদের অংশগ্রহণ এবং তারা যেভাবে নিজেদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে, বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে ধারণ করেছে, তাতে সত্যিই আমি আনন্দিত।’
মেহের আফরোজ শাওন প্রবাসে শিশুদের চমৎকার বেড়ে ওঠার পেছনে মা-বাবার কৃতিত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘তারা যেভাবে বাংলা উচ্চারণে কবিতা আবৃত্তি করল, তাতে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি।’
এমন আয়োজনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, ‘শিশুদের কাছে বাংলাদেশের সঠিক ও তথ্যনির্ভর ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। তাদের জানাতে হবে জাতির পিতার কথা। তারা যেখানেই থাকুক। প্রবাসে বেড়ে ওঠা শিশুরা যেহেতু অনেকে বাংলা পড়তে পারে না, তাদের ইংরেজিতেই জানাতে হবে। সম্ভব হলে শেখাতে হবে প্রিয় মাতৃভাষা বাংলাও। এসব চিন্তা থেকেই বঙ্গবন্ধু বইমেলায় নতুন এই সংযোজনটি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’
এদিকে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কে গত ২০ শুক্রবার তিন দিনের বইমেলা শুরু হয়। বিপুল পাঠক সমাগম, সাধারণ প্রবাসীদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল গোটা মেলা পিএস ৬৯। এর আগে ডাইভারসিটি প্লাজায় একটি উদ্বোধনী সমাবেশ হয়। সেখানে বেলুন উড়িয়ে এই বইমেলার উদ্বোধন করেন লেখক ও সাংবাদিক আনিসুল হক। এ সময় রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী ও সাধারণ প্রবাসীদের একটি মিলনমেলায় পরিণত হয় গোটা এলাকা।
বঙ্গবন্ধু বইমেলার উদ্বোধন করে লেখক আনিসুল হক বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ সামনে রেখে নিউইয়র্কের এই বইমেলা অসাধারণ একটি উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধু নিজে একজন সুলেখক ছিলেন। তাঁর ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লেই আমরা সেটা বুঝতে পারি। তিনি ছিলেন সবার মানুষ। তাই সবার অংশগ্রহণে এই মেলাকে সফল করতে হবে।”
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকা বিরোধিতা করেছিল। আজ সেই মাটিতেই জাতির পিতা স্মরণে বইমেলা হচ্ছে।’ এটিকে ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আয়োজনের উপদেষ্টা বেলাল বেগ, সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, ডা. ফেরদৌস খন্দকার, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদসহ অনেকে। বঙ্গবন্ধু বইমেলার শিবলী সাদেক শিবলুর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন পরিষদের আহ্বায়ক আবু রায়হান। এ ছাড়া বক্তব্য দেন মুজিববর্ষ উদযাপন পরিষদ যুক্তরাষ্ট্র শাখার আহ্বায়ক মিশুক সেলিম এবং সদস্য সচিব নুরুল আমিন বাবু। লেখকদের মধ্যে শামীম আল আমিন, পপি চৌধুরী, জুলি রহমানসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
পরে ডাইভারসিটি প্লাজা থেকে একটি শোভাযাত্রা পিএস ৬৯ স্কুলে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে উদ্বোধন অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। শ্রদ্ধা জানানো হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার প্রতি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পরে সেখানে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। মেলা উপলক্ষে গোটা স্কুল প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। বিভিন্ন স্টলে বই সাজিয়ে বসেন প্রকাশকরা। বইপ্রেমীরাও ছুটে আসেন মেলায়।