রমজানের শেষে জাহান্নাম থেকে মুক্তি মেলে

স্বাস্থ্য-সৌন্দর্য, শিক্ষা-দীক্ষা, টাকা-পয়সা, সম্পদ-ঐশ্বর্য, গাড়ি-বাড়ি, ক্ষমতা-পদমর্যাদা কোনো কিছুতেই মানবজীবনের সাফল্য আসতে পারে না যদি না জাহান্নাম থেকে মুক্তি আর জান্নাতের অধিকার অর্জন করতে পারা যায়। মহান আল্লাহ মানবজীবনের সাফল্যের ঠিকানা বাতলাতে গিয়ে এরশাদ করেছেন, হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। তিনি তোমাদের সমস্ত আমল সংশোধন করে দেবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে, সে অবশ্যই লাভ করবে মহা সাফল্য। (সুরা আল-আহজাব : ৭০, ৭১) আরো এরশাদ হয়েছে, প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আর নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন তোমাদের সব আমলের বদলা পুরোপুরি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করবে। আর পার্থিব জীবনটা ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া অন্য কিছু নয়। (সুরা আল ইমরান : ১৮৫)
মুমিন বান্দার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির মহান সুযোগ নিয়ে পরম করুণাময়ের বিশেষ উপহার হিসেবে বছর ঘুরে আসে মাহে রমজান। বিশেষ করে রমজান মাসের শেষ ১০ দিন। এ ১০ দিনকে রাসুলে কারিম (সা.) মাগফিরাতের দশক বলে নামকরণ করেছেন। তিনি বলেছেন : ওয়া আখিরুহু ইতক্বুম মিনান্-নার ’- আর এর শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য। (সহিহ ইবনে খুজাইমা, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ১৯১, হাদিস : ১৮৮৭) রাসুলুল্লাহ (সা.) মাহে রমজানের শেষ দশক আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগিতে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করতেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রমজান মাসের শেষ দশক আগমনের সঙ্গে সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) কোমর বেঁধে নিতেন (ইবাদত-বন্দেগির জন্য বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন)। তিনি নিজে রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সদস্যদের জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ আল-বোখারি : ২০২৪) বস্তুত রমজান মাসের শেষ ১০ দিনে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর বিশেষভাবে ইবাদত-বন্দেগি করার কারণ ছিল, লাইলাতুল ক্বদরকে অনুসন্ধান করা। হজরত আয়েশা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে অবস্থান করতেন এবং বলতেন : তোমরা রমজান মাসের শেষ ১০ দিনে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করো। (সহিহ আল-বোখারি : ২০২০)
মাহে রমজান হলো উম্মতে মোহাম্মদির প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। বলা যায়, উম্মতে মোহাম্মদি পৃথিবীর সর্বকালীন উম্মতের শ্রেষ্ঠ হওয়ার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো রমজান মাস। পূর্ববর্তী সব উম্মতের ওপর রোজার বিধান থাকলেও রমজান মাসকে কেন্দ্র করে মহান আল্লাহ উম্মতে মোহাম্মদিকে যে তাঁর মহান সান্নিধ্য লাভের এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি অর্জনের ও জান্নাতপ্রাপ্তির সমূহ সুযোগ দান করেছেন তা পূর্ববর্তী কোনো উম্মতকেই দেওয়া হয়নি। রমজান মাসের প্রথম দিন থেকে আল্লাহর করুণা অবিরত ধারায় নাজিল হতে থাকে। প্রথম ১০ দিনের ইবাদতের মাধ্যমে মুমিন বান্দা মহান প্রভুর একান্ত নৈকট্য অর্জন করে। অতঃপর দ্বিতীয় দশকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের তাদের জীবনের পাপরাশি ক্ষমা করে দিয়ে মর্যাদার বিশেষ আসন দান করেন। সবশেষে মোবারক মাসের শেষ দশকে আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দান করেন। তাই রমজান মাস পেয়েও যারা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমত থেকে বঞ্চিত থেকে গেল, নিজের গুনাহর জন্য মহান মাওলার ক্ষমালাভে ব্যর্থ থেকে গেল এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি অর্জন করতে পারল না তারা আসলেই হতভাগা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যার সামনে আমার নাম উল্লেখ করা হলো আর সে আমার ওপর দুরুদ পড়ল না এবং ওই ব্যক্তির ধ্বংস হোক যে তার মা-বাবাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। আর ওই ব্যক্তির ধ্বংস হোক যে রমজান মাস পেল অথচ তার গুনাহ মাফ করা হলো না। (মুসনাদে বাজার : ৮৪৬৫)