আপনার জিজ্ঞাসা
বিধবা নারীর ইদ্দত পালন করা কি বাধ্যতামূলক?

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
রমজানের বিশেষ আপনার জিজ্ঞাসা অনুষ্ঠানের ১৪তম পর্বে বিধবা নারীদের ইদ্দত পালনের বিষয়ে টেলিফোনে চট্টগ্রাম থেকে জানতে চেয়েছেন মো. কফিল উদ্দিন। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : স্বামী মারা যাওয়ার পর মহিলারা যে ইদ্দত পালন করেন, এটার সময়সীমা তিন মাস ১০ দিন বা ১০০ দিন বলা হয়েছে। এর কারণ জিজ্ঞেস করায় একজন আলেম বলেন, এটা তাঁর জরায়ুর পবিত্রতা। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এখন তো আধুনিক আলট্রাসনোগ্রাফি বা প্রেগন্যান্সি টেস্টের মাধ্যমে এটা মুহূর্তের ভেতর যাচাই করা যায়। সুতরাং এটার আদৌ প্রয়োজন আছে কি না এবং এই ইদ্দতের কারণটা কী?
উত্তর : এ ভাই যে প্রশ্ন করেছেন ইদ্দত পালনের ব্যাপারে, সেখানে প্রথমে যে তথ্য তিনি দিয়েছেন, সেটি ভুল। এটি তিন মাস এক দিন নয়, হবে চার মাস ১০ দিন।
দ্বিতীয় যে কথাটি বলেছেন, এর কারণ হিসেবে জরায়ুর পবিত্রতা, এটি শুধু জরায়ুর পবিত্রতার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। জরায়ুর পবিত্রতার মাসআলাটি হচ্ছে তালাকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর ইদ্দত হচ্ছে মূলত যার স্বামী মারা গেছে, তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এখানে অনেকগুলো মৌলিক বিষয় রয়েছে। তিনি হয়তো এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বলতে পারেননি, শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। জরায়ুর পবিত্রতা এখানে রয়েছে, কোনো সন্দেহ নেই। এ ছাড়া এখানে নৈতিক অনেক বিষয় রয়েছে। সে বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, একজন মহিলার যখন স্বামী মারা যাবে, তখন সঙ্গে সঙ্গেই তার বিয়ের যে ব্যবস্থা, সেটিতে মূলত সামাজিক বা লৌকিক একটা অসৌন্দর্য তৈরি হয়। তা ছাড়া মানসিক একটা বিষয়ও আছে, সে তখন একটা শোকের মধ্যে থাকে। এ বিষয়গুলো নিয়ে ‘ফিকহ কিতাব’-এর মধ্যে অনেক দীর্ঘ আলোচনা করা হয়েছে।
তবে মূল বিষয় হচ্ছে, তাকে একটু সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে সে সব দিক থেকে ধীরস্থির হবে, সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সে জন্য এখানে ইসলাম বিষয়টাকে মৌলিকভাবে গুরুত্ব দিয়ে, যাতে করে ভুল না হয়, এ জন্য এটাকে একটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্ধারণ করে দিয়েছে।
এই নির্ধারণটা আধুনিক যুগে যান্ত্রিক পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল নয়। কারণ, যান্ত্রিক পদ্ধতির মধ্যে ভুল হয়ে যেতে পারে। ভুল হয়ে গেলে তখন কী অবস্থা হবে? আর সে জন্য এটাকে আধুনিক পদ্ধতির ওপর নির্ধারণ করা হয়নি।
আর এটি তো শুধু জরায়ু সম্পৃক্ত বিষয় নয়। এর সঙ্গে আরো অনেক বিষয় জড়িত আছে। তাই সেগুলো ছাড়াও যদি শুধু জরায়ুর বিষয়টিও ধরা হয়, সেটি শুদ্ধ না-ও হতে পারে।
ইদ্দতের বিধানটি যে শুধু আধুনিক যুগের জন্য দেওয়া হয়েছে তা নয়, এটি কেয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আর যেখানে এ পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই সেখানে কী হবে? ইসলাম তো সর্বজনীন এবং সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাই কেয়ামত পর্যন্ত মানুষের জন্য এ বিধান দেওয়া আছে, যাতে করে মানুষ সেখান থেকে উপকৃত হতে পারে। তাই একটি সময়ের জন্য নয়, একটি শ্রেণির জন্য নয়; বরং সব শ্রেণির জন্য যেন এটি কার্যকর হতে পারে, এ জন্য এটাকে ব্যাপক করা হয়েছে।
এখানে লক্ষ করা গেছে, আমাদের ভাই যে আলেমেকে প্রশ্ন করেছেন, সে আলেম সঠিক জবাব না দেওয়ার কারণে উনার মধ্যে নানান প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যেকোনো বিষয়ে সঠিক জবাব দেওয়ার চেষ্টা করব। আর না জানলে আমরা বলব না। পরে আমরা জেনে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করব। তাহলে অনেক সমস্যা থেকে আমরা মুক্ত হয়ে যেতে পারি।