আপনার জিজ্ঞাসা
কেন ঈমান নষ্ট হয়?

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৮৬৯তম পর্বে চিঠিতে কেন নষ্ট হয়, সে সম্পর্কে নীলফামারী থেকে জানতে চেয়েছেন ইবনে মনির। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : ঈমানের পূর্ব শর্ত কী? কী কী কাজের মাধ্যমে একজন মুসলিমের ঈমান ভেঙে যায় অথবা ঈমান নষ্ট হয়?
উত্তর : এটি অনেক দীর্ঘ আলোচ্য বিষয়। তবে সংক্ষেপে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করতে চাই।
ঈমানের পূর্ব শর্ত হচ্ছে সাতটি। সেগুলো অনেক দীর্ঘ আলোচ্য বিষয়। এগুলো আপনাদের নিজেদের বিভিন্ন বই পড়ে জানতে হবে।
ঈমানের এই শর্তগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিয়ে এখানে আলোচনা করব। প্রথমটি হচ্ছে, ইলম। আপনি ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ‘কালিমাতুত তাওহিদ’ এর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর ঘোষণা দেবেন। এর জন্য আপনার জ্ঞান থাকতে হবে। জানতে হবে। আপনি ঈমান আনছেন অথচ আপনি জানেন না ঈমান কী জিনিস। ঈমানের মূল কথা সম্পর্কে জ্ঞান নেই। আসলে ঈমান হচ্ছে ‘কালিমাতুত তাওহিদ’ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং কালিমাতুত তাওহিদের দুটি অংশ।
একটি হচ্ছে, শাহাদাত ‘লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ’, ‘ আপনি সাক্ষ্য দিবেন যে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।’ আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ‘মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’। সাক্ষ্য দিবেন যে, মোহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।
একটা হচ্ছে তাওহিদের দিক এবং অন্যটি হচ্ছে রিসালাতের দিক। দুটি সাক্ষ্যই কিন্তু অপরিহার্য। আপনি যদি মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর (সা.) রিসালতের সাক্ষ্য না দেন, তাহলে আল্লাহ তায়ালার তাওহিদের সাক্ষ্য দিলেন না। হয়তো মনে করছেন আমি তো তাওহিদের সাক্ষ্য দিয়েছি, যেটি ভুল কথা। একটি অপরটির সঙ্গে জড়িত। তাই কেউ যদি মোহাম্মদ (সা.)-এর রিসালাতের বিষয়টি স্বীকৃতি না দেয়, সে কিন্তু সত্যিকার ঈমানদার হতে পারবে না।
দ্বিতীয় হচ্ছে, ‘আল ইয়াকিন’ অর্থাৎ সন্দেহের কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। আপনি ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওহিয়তের, মোহাম্মদ (সা.) এর রিসালাতের। কিন্তু একটু সন্দেহ, সংশয়ের মধ্যে আছেন, অথবা ঘোষণা দিচ্ছেন মৌখিক, ভেতরে আসলে সন্দেহ আছে, মুনাফিক। এটা দীর্ঘ একটি আলোচ্য বিষয় আসলে। এই জিনিসগুলো অবশ্যই পূর্ণ করতে হবে আপনাকে। যদি এই শর্তগুলো পরিপূর্ণ করতে না পারেন, তাহলে আসলে সত্যিকার ঈমানদার হতে পারবেন না। ঈমানের ঘোষণাটা শুদ্ধ হলো না।
এরপর আসবে, যেগুলো ঈমান নষ্ট করে, সেগুলো থেকে বিরত থাকা। এর মধ্যে প্রথম নওয়াকেদ হচ্ছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে শিরক করা। দ্বিতীয় নওয়াকেদ হচ্ছে, আল্লাহ এবং বান্দার মধ্যে মাধ্যম, অন্য একজনকে মনে করা যে ইনিই সবকিছু করে দেবেন। আল্লাহ তায়ালার কাছে মাধ্যম নির্ধারণ করা। তৃতীয় হচ্ছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ বিধানকে বাদ দিয়ে, মানুষের মনগড়া বিধানকে মনে করা যে, এগুলোই শ্রেষ্ঠ, গ্রহণযোগ্য, এগুলোই চলবে, আল্লাহর কোনো বিধানের এখানে গুরুত্ব নেই, এ যুগে চলে না। চতুর্থ হচ্ছে, কোনো ব্যক্তির দাবি করা যে, আমি গায়েব সম্পর্কে জানি। অদৃশ্য জ্ঞানের দাবিদার। যেমন : জাদুকর, দৈবজ্ঞ, গণক। এগুলো আসলে হচ্ছে প্রতারণা। যদি কেউ এটাকে স্বীকার করে নেয় তাহলে সে ঈমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে।
এখানে কিছু পয়েন্ট রয়েছে বিস্তারিত। বাকিগুলো জানার জন্য নিজে থেকে চেষ্টা করুন।