হজের অপরিহার্য বিধানসমূহ

হজ ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের অন্যতম। সীমাহীন গুরুত্ব ও ফজিলতপূর্ণ এ বিধানটি প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিম নর-নারীর ওপর জীবনে একবার পালন করা ফরজ। হজের ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি যৌনতা ও পাপাচার থেকে বিরত থেকে হজ সম্পন্ন করে, সে মায়ের পেট থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। (সহিহ আল-বোখারি ও সহিহ মুসলিম) সীমাহীন ফজিলতপূর্ণ হজ যাদের ওপর ফরজ হয়, তাদের উচিত যতদ্রুত সম্ভব তা পালন করা। হজের মাসাইল যথাযথভাবে পালন করতে না পারার কারণে অনেকেই হজ করার পরেও হজের সওয়াব থেকে বঞ্চিত থেকে যান। তাই প্রত্যেক হজযাত্রীর উচিত হজের মাসআলা-মাসাইল ভালো করে জেনে নেওয়া, বিশেষ করে অপরিহার্য বিধানগুলো শিক্ষা করা। অপরিহার্য বিধান বলতে হজের ফরজ ও ওয়াজিবকে বোঝায়।
হজের ফরজ
হজের ফরজ মোট তিনটি। যথা : এহরাম বাঁধা : হজ ও উমরা পালনের নিয়তে যাঁরা মক্কার উদ্দেশে গমন করেন, তাঁদের মিকাত অতিক্রম করার আগে এহরামের কাপড় পরে নিতে হবে। এহরাম না পরে মিকাত অতিক্রম করা তাদের জন্য জায়েজ নয়। সমগ্র পৃথিবীর বিভিন্ন দিক থেকে আগত হজযাত্রীদের জন্য পাঁচটি নির্দিষ্ট স্থানকে ইসলামী শরিয়ত মিকাত হিসেবে নির্ধারণ করেছে। (ক) জুল হোলায়ফা : এটি মদিনাবাসী এবং মদিনার পথে আগমনকারী হজযাত্রীদের মিকাত যার বর্তমান নাম ‘আবইয়ারে আলী’। (খ) সিরিয়াবাসী এবং সিরিয়ার পথ ধরে আগমনকারী হাজিদের মিকাত হলো ‘জোহফা’, যার বর্তমান নাম ‘রাগেব’। (গ) নাজদের অধিবাসী ও ওই পথে আগমনকারী হাজিদের মিকাত হলো, ‘কারনুল মানাযেল’, যার বর্তমান নাম ‘আস সায়লুল কাবির’। (ঘ) ইয়েমেনের অধিবাসী ও ওই পথে আহমনকারীদের মিকাত হলো, ‘ইয়ালামলাম’ পাহাড়, যার বর্তমান নাম সা’দিয়াহ। সমুদ্রপথে আগমনকারী বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ান দেশগুলোর হাজিদের মিকাত এটাই। (ঙ) আর ইরাকবাসীদের মিকাত হলো ‘জাতে ইরাক, যার বর্তমান নাম ‘দারিবাহ’।(২) উকুফে আরাফাহ অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা : জিলহজ মাসের ৯ তারিখ সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে ১০ তারিখ সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত যে কোনো সময় আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা ফরজ। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সামান্য সময়ও আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করলে হজের ফরজ আদায় হয়ে যাবে। (৩) হজের তৃতীয় ফরজ, তাওয়াফে জিয়ারাহ করা : আরাফাতে অবস্থানের পরে কাবা শরিফে তাওয়াফ করা। এ তাওয়াফকে তাওয়াফে ইফাজাহও বলা হয়। হজের ফরজগুলোর মধ্য থেকে কোনটা ছুটে গেলে হজ হবে না পরবর্তী সময়ে আদায় হজ আদায় করতে হবে।
হজের ওয়াজিব
হজের ওয়াজিব মোট পাঁচটি। যথা : (ক) উকুফে মুজদালিফাহ : আরাফাতে অবস্থানের পর ১০ জিলহজের সুবেহ সাদিকের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সামান্য সময়ের জন্য হলেও মুজদালিফায় উকুফ তথা অবস্থান করা ওয়াজিব। (খ) জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করা। মুজদালিফায় অবস্থানের পর মিনায় স্থাপিত শয়তানের তিনটি প্রতিকৃতিতে (আকাবা, উসতা ও সুগরা তথা বড়, মধ্যম ও ছোট) কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। (গ) সাফা-মারওয়াতে সাঈ করা : সাফা ও মারওয়া পাহাড় দুটির মাঝখানে সাতবার সাঈ করতে হবে। সাঈ শুরু হবে সাফা পাহাড়ের দিক থেকে আর শেষ হবে মারওয়াতে গিয়ে। (ঘ) তামাত্তু ও কেরান হজ আদায়কারীদের জন্য দমে শোকর তথা কোরবানি করা। (ঙ) মাথার চুল মুণ্ডন করা বা ছোট করা। হজের ওয়াজিবগুলো থেকে কোনো একটি বা একাধিক ওয়াজিব ইচ্ছাকৃত বর্জন করলে হজ হবে না। পরবর্তী সময়ে পুনরায় হজ আদায় করতে হবে। আর যদি ভুলবশত কোনো ওয়াজিব ছুটে যায় তাহলে দম দিলে অর্থাৎ একটি হালাল জন্তু আল্লাহর ওয়াস্তে কোরবানি দিলে হজ শুদ্ধ হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ সব হজযাত্রীকে বিশুদ্ধভাবে হজ আদায়ের তাওফিক দান করুন!