আপনার জিজ্ঞাসা
গুল ব্যবহার করা মোবাহ নাকি হারাম?

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৮৮০তম পর্বে মধ্যবাড্ডা, ঢাকা থেকে চিঠিতে তামাক, জর্দা, সিগারেট, গুল ইত্যাদি খাওয়া হারাম কি না, সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন আয়েশা খাতুন। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : তামাক, জর্দা, সিগারেট, গুল এগুলো খাওয়া কি হারাম? কেউ কেউ বলেন, গুল ব্যবহার করা মোবাহ (এমন কর্ম যা সম্পাদন বা বর্জন করা কোনোটিই ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ নয়)।
উত্তর : খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। কারণ, আমাদের সমাজে এ জিনিসগুলো এতই ব্যাপকতা লাভ করেছে যে, কোথাও কোথাও এগুলোকে সুন্নতি তরিকা হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে। এ জন্য এ বিষয়টি আমাদের খুব ভালো করে জানা দরকার।
তামাক, জর্দা, গুল, সিগারেট ইত্যাদি যেগুলো আপনি উল্লেখ করেছেন, সবগুলোর উৎস একটাই। সবগুলোর মূলেই হচ্ছে তামাক পাতা এবং এই তামাক পাতা এতই বিষাক্ত যে, এই পাতা গরু-ছাগল পর্যন্ত খায় না। এই পাতা যে ভূখণ্ডে বা জমিনে তিন বছর চাষাবাদ করা হয়, তার পরের বছর সেখানে কোনো ফসল হয় না। মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। অত্যন্ত বিষাক্ত একটি পাতা। একে প্রথমে শুকানো হয়। এরপর যতটুকু বিষ থেকে যায় সেটা থেকে সিগারেট, জর্দা, গুল, সাদাপাতা ইত্যাদি তৈরি করা হয়ে থাকে এবং সেগুলো অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ ক্ষতির বিষয়টি দুনিয়ার কোনো জাহিল ব্যক্তিও দ্বিমত পোষণ করেন নাই, আর আলেম তো দূরের কথা।
সব ধরনের মানুষ এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে যে, এটি স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর ক্ষতিকর। এই ভয়ংকর ক্ষতিকর বিষয়গুলো ইসলাম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে। ইসলাম ক্ষতিকর কোনো জিনিস কোনোভাবেই নিজের জন্য সেবন করা, গ্রহণ করার অনুমতি দেয়নি। আমির ইবনে সোয়াইব থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তাঁর পিতা তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামের মধ্যে মূলত কোনো ধরনের অনিষ্ট নেই এবং কোনো ধরনের ক্ষতিকর কিছু নেই, ক্ষতি করার মতো কোনো কিছুই কেউ নিতে পারবে না।’ এই ব্যাখ্যার মধ্যে সব ওলামায়ে কেরাম ঐকমত্যে বলেছেন, যেসব বস্তুর মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি হয়ে থাকে, সেগুলো মানুষ নিজে গ্রহণ করতে পারবে না এবং অন্যকেও গ্রহণ করতে দিতে পারবে না। সুতরাং এটি একেবারেই নিষিদ্ধ।
আবার শুধু যে ক্ষতিকর তাই-ই নয়; এগুলো ক্ষতির মধ্যে সবচেয়ে খাবিস। যেমন : এগুলো দুর্গন্ধময়, এগুলোর মাধ্যমে শারীরিক অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। কোরআনে কারিমে আল্লাহ সুবানাহুতায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তিনি তোমাদের ওপর হারাম ঘোষণা করবেন সব প্রকার খাবিস বস্তুসমূহ।’ খাবিসের তফসিরের মধ্যে ওলামায়ে কেরামরা বলেছেন যে, এই বস্তুগুলো হচ্ছে খাবিস। কারণ, এগুলো মানুষের জন্য ক্ষতিকর, অনিষ্টকর। তাঁর সঙ্গে অতিরিক্ত হিসেবে রয়েছে এগুলো দুর্গন্ধময়। এই দুর্গন্ধের জন্য মানুষ তো কষ্ট পায়ই, তাঁর সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর ফেরেশতারা পর্যন্ত কষ্ট পায়।
রাসূল (সা.) হাদিসের মধ্যে বলেছেন, ‘আদম সন্তান যেসব দুর্গন্ধ থেকে কষ্ট পায়, ফেরেশতারাও সেখান থেকে কষ্ট পায়।’ এ জন্য এই কাজগুলো ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে হারাম। কারণ, এগুলোর মধ্যে কোনো ফায়দা বা কল্যাণ নেই, শুধু অকল্যাণ ছাড়া। এই দর্শকের তথ্যটি যে তামাক, গুল ব্যবহার করা মোবাহ, এটি ভুল। এটি মোবাহ নয়, এই কাজগুলো সম্পূর্ণ হারাম।