আপনার জিজ্ঞাসা
অন্যের কাছে শুনে শিরক করলে পাপ হবে কার?

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৮৮২তম পর্বে কারো কাছে শুনে ভুল আমল করলে পাপ কার হবে, সে সম্পর্কে ইমেইলে জানতে চেয়েছেন মো. বেল্লাল। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : আমি জানতে চাই, বড় বড় আলেমদের কাছ থেকে কোরআন হাদিসের কথা শুনে সে অনুযায়ী আমল করি। আমার সে আমল যদি বেদাত, শিরক অথবা কুফর হয়ে যায়, তাহলে পাপ কার হবে? যে আমল করল তাঁর, নাকি যার কথা শুনে আমল করল তার?
উত্তর : প্রথমে পাপটা আপনারই হবে। যেহেতু আপনি কাজটা করেছেন। তারপর যিনি আপনাকে এ কাজের জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, ভুল নির্দেশনা দিয়েছেন তিনিও এর জন্য গুনাহগার হবেন। কিন্তু আপনাকে একটা বিষয় নিশ্চিত হতে হবে। সেটা হলো এই, আপনি যে আমল করছেন, যে কাজটি করছেন, সেটা ইসলাম কতটুকু অনুমোদন দিয়েছে।
শুধু একজন ব্যক্তি অথবা একজন আলেমকে জিজ্ঞেস করেই যথেষ্ট হবে না। যেমন : একজন এসে আপনাকে বলবে যে, হ্যাঁ কবরে সেজদা দেওয়া ফজিলতের কাজ।
কবরে যদি কেউ সেজদাহ দিয়ে থাকে তাহলে তাঁর সওয়াব আছে, ইত্যাদি। তাঁর মাকসাদ হাসিল হবে। এটা শুনলেই যথেষ্ট হবে, নাকি আপনি আল্লাহর বিধানের কাছে আসবেন। কোরআন ও হাদিস থেকে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, এটা তো ইসলাম অনুমোদন দেওয়ার কথা নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য সেজদাহ করার কথা ছিল। সেই সেজদাহ আপনি গায়রুল্লাহর জন্য করছেন। সুতরাং এখানে বিবেচনার বিষয় আছে। আরো ব্যাপকভাবে এ বিষয়গুলো জানার প্রয়োজন আছে। যদি কোনো বিষয়ে সন্দেহ থাকে, তাহলে সত্যিকার আলেমের কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে।
একজন লোককে আপনি দেখলেন যিনি দাড়ি রেখেছেন, টুপি মাথায় দিয়েছেন, লম্বা জুব্বা গায়ে দিয়েছেন। শুধু এই অবস্থা দেখেই কি আপনি বলবেন, তিনি আলেম?
একজন আলেমকে আগে তিনটি প্রশ্ন করুন। সেটা হলো : কোরআন ও হাদিসের জ্ঞান তাঁর কাছে আছে কি না, তিনি সত্যিকার অর্থেই কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী নিজে আমল করেন কি না এবং তিনি সত্যিকারভাবেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে ভয় করেন কি না। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে, যদি তিনি আল্লাহকে ভয় না করেন তাহলে তিনি আলেম নন।
দ্বিতীয়ত, তিনি যদি কোরআন ও হাদিসের এলম অনুযায়ী আমল না করে থাকেন, তাহলে তিনি আলেম নন।
তৃতীয়ত, তাঁর কাছে যদি এলম থাকে, তাহলে আসলে তাঁর কাছে কোরআন ও হাদিসের এলম মানছেন কি না, নাকি তিনি আসলে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে নিজের মনগড়া বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। কোরআন, হাদিস থেকে যদি তিনি বলেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই অন্যের কাছ থেকে আবার যাচাই করতে হবে যে, আসলে তিনি ঠিক বলেছেন কি না।
দ্বীনের ব্যাপার, আপনার আখেরাতের নাজাতের বিষয় এবং দুনিয়ার শান্তির বিষয়। এটা আপনি শুধু একজনের বক্তব্যের ওপর নির্ভর করেই আমল করা শুরু করে দেবেন— এটা হতে পারে না। আপনি জিজ্ঞেস করুন, জানুন, উনি যে বক্তব্য দিচ্ছেন সেটা কি হাদিসভিত্তিক, দলিলভিত্তিক, নাকি তাঁর প্রবৃত্তির অনুযায়ী তিনি বলছেন। যিনি বলছেন, তাঁকেও জিজ্ঞেস করতে পারেন।
কোরআনে কারিমের মধ্যে আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা সেটা বলেছেন, ‘যদি তোমরা না জান, তাহলে যাদের জানা আছে, যাদের কাছে জ্ঞান আছে, সত্যিকার তথ্য রয়েছে, তাঁদের তোমরা জিজ্ঞেস করো।’
তবে এই জিজ্ঞাসা আন্দাজে, অনুমানের ওপর হবে না। সেটা হবে সুস্পষ্ট প্রমাণের মাধ্যমে যে, আপনি যেটা বলছেন সেটা কি আসলে হাদিস থেকে বলছেন নাকি আন্দাজে বলছেন। যদি আপনার কাছে স্পষ্ট হয় যে, তিনি হাদিস, সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম, সহিহ হাদিস গ্রন্থ এবং কোরআনের কথা বলছেন, তাহলে আপনি নির্ভর করতে পারেন। যদি আপনার কাছে বড় ধরনের তাহকিক করার সুযোগ না থাকে।
ধর্মের ক্ষেত্রে আসলে অনেক সময় লোকদের খুব অসহায় মনে হয়। অক্ষর জ্ঞান না থাকলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বা মাদ্রাসার দোরগোড়ায় না গিয়েও মানুষের বিবেচনা শক্তি বা তাঁর কাছে যে বিবেক আল্লাহ দিয়েছেন, সেটা দিয়েও তো সত্য-মিথ্যা যাচাই করা যায়। অন্ততপক্ষে ইবাদত নিয়ে কেউ কিছু বললে মনে প্রশ্ন তো সৃষ্টি হতেই পারে। এখানে আসলে মানুষের আত্মজাগৃতিও প্রয়োজন।