আপনার জিজ্ঞাসা
আয়াতুল কুরসি লেখা কাপড় কফিনের ওপর বিছানো কি ঠিক?

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৮৮৪তম পর্বে মৃত ব্যক্তির লাশের ওপর আয়াতুল কুরসি লেখা কাপড় বিছিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে ইমেইলে জানতে চেয়েছেন এ বি এম জাহিদ। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : আমরা কোরআন শরিফ সব সময় সম্মান করে থাকি। কোরআন শরিফ যেখানে থাকে, তাতে পা লাগলে আমরা তাতেও সালাম করি। অথচ মানুষ মারা গেলে আয়াতুল কুরসি লেখা কাপড় কফিনের ওপর বিছিয়ে দেওয়া হয়। তখন সে কাপড় মৃতের গায়ে এবং পায়েও লাগে। এ বিষয়ে কিছু বলবেন?
উত্তর : খুব সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। কোরআন শরিফকে সম্মান করা হয় কোনো সন্দেহ নেই। এটি আল্লাহর কালাম। কোরআনে কারিমের মধ্যে আল্লাহ রাব্বুলআলামিন বলেছেন, ‘এটা হচ্ছে আল্লাহর কালাম, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কথা। তাই এর মর্যাদা পৃথিবীর যত কথা আছে সব কথার অনেক ঊর্ধ্বে।’ (সূরা- তওবা)
যেহেতু স্রষ্টার বক্তব্য, স্রষ্টার কথা, তাই এর সম্মান আমাদের করতেই হবে এবং সম্মান করাটা ঈমানদার ব্যক্তিদের ঈমানের দাবি। কোরআনে কারিমের কোনোভাবে অবমাননা করা মূলত ঈমানের পরিপন্থী কাজ। কারণ আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল এবং আল্লাহর আয়াতকে নিয়ে কেউ যদি ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তাহলে সে ব্যক্তি কুফরি করল। এটি কোরআনের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘তোমরা এই আল্লাহর আয়াতের সঙ্গে, নিদর্শনগুলোর সঙ্গে যদি ঠাট্টা, বিদ্রুপ কর, তাহলে ঈমানের ওপর তোমরা কুফরি করলে।’
সুতরাং এ কাজটি কুফরি। তাই আল্লাহর কালামের অবমাননা কোনোভাবেই করা জায়েজ নেই, এটি নিষিদ্ধ কাজ।
আর আপনি যে কাজটির কথা বলেছেন, সেটা আসলে আমাদের মধ্যে একটি প্রবণতা। আয়াতুল কুরসি খচিত কাপড় যদি মৃত ব্যক্তির লাশের ওপর দেওয়া হয়ে থাকে এতে তাঁর কোনো মর্যাদা নেই। কোনো লাভ নেই। কারণ এতে তাঁর কোনো ফায়দা হবে না।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, পুরো কোরআন লিখে দিলেও যদি সত্যিকার ঈমান এবং আমলের ওপর তার মৃত্যু না হয়ে থাকে তাহলে এর মাধ্যমে কোনো সওয়াব বা মর্যাদা লাভ করতে পারবে না। মৃত্যুর পর তো তার কোনো আমল নেই। এ কাজ আমরা একেবারেই না বুঝে, আবেগের ওপর নির্ভর করে একটি ভুল কাজ করে যাচ্ছি। এই ভুল কাজটির সর্বনিম্ন পর্যায় হচ্ছে, যদি কেউ এটাকে ইবাদত হিসেবে মনে করে, যে মৃত ব্যক্তিকে এভাবে দাফন করতে হবে তাহলে এটি বেদাত এবং হারাম কাজ হবে। আর যদি বেদাত হিসেবে না করে থাকে তাহলে এটি কোরআনের অবমাননা হবে। সেটাও কোনো সন্দেহ নেই হারাম কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। যেহেতু কোরআনে কারিমকে এভাবে অপব্যবহার করা অথবা যেখানে ব্যবহার করার কথা নয়, সেখানে ব্যবহার করা- এটি হারাম, জায়েজ নেই।
আল্লাহর কালাম তো অবতীর্ণ হয়েছে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে। এর কাজ কী হবে, এর হক কী হবে, এগুলো স্পষ্ট করে আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা জানিয়ে দিয়েছেন। এখন কোরআনকে এভাবে ব্যবহার করা, কাপড়ে খোদাই করে মৃত লাশের ওপর ব্যবহার করবেন, এটি মূলত কোরআনে কারিমকে সত্যিকার অবমাননা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ কাজটি মূলত আমরা আবেগের কারণে করলেও এ কাজের মধ্যে ভুল আছে। একে সংশোধন করে নিতে হবে।