আপনার জিজ্ঞাসা
হজ-পরবর্তী সময়ে হাজিদের করণীয় কী?

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
বিশেষ আপনার জিজ্ঞাসার ৪৭৭তম পর্বে পাবনা থেকে টেলিফোনে হজ-পরবর্তী সময়ে হাজিদের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় সম্পর্কে টেলিফোনে জানতে চেয়েছেন আনিসুর রহমান। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : হজ-পরবর্তী সময়ে আমাদের করণীয় এবং বর্জনীয় কী?
উত্তর : আসলে করণীয় ও বর্জনীয় দুটি একই জিনিস। করণীয় যদি আমরা জানতে পারি, বর্জনীয়ও আমরা খুব সহজে জানতে পারব। প্রথম কথা হচ্ছে, হজে গিয়ে হাজিরা যেই তালবিয়া পাঠ করেছেন, সেই তালবিয়ার মূল যে দাবি আছে, সেটাকে পূরণ করতে হবে।
সর্বপ্রথম হচ্ছে তাওহিদ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের তাওহিদকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাওহিদের পরিপন্থী কোনো কাজ একজন আল্লাহর বান্দা, আর যদি তিনি হাজি সাহেব হয়ে থাকেন, তাঁর জন্য করা জায়েজ নেই। তাওহিদের পরিপন্থী কাজগুলো প্রত্যেকটাই মূলত ব্যক্তির ইমান, আমল ও তাঁর সব কৃতকর্মকে ধ্বংস করে দেয়। সেটা হচ্ছে শিরক।
দ্বিতীয় হচ্ছে, নিজের ব্যক্তিগত জীবনে রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহর অনুসরণকে প্রাধান্য দেবেন। তিনি সুন্নাহ অনুযায়ী বাকি জীবনটি কাটানোর চেষ্টা করবেন।
তৃতীয় পয়েন্টটি হচ্ছে, আল্লাহ সুবানাহুতায়ালা বলেছেন, ‘হজ করার পরে যদি সত্যিকার হাজি মাবরুর করে থাকেন, তাহলে তাঁর অবস্থা হচ্ছে, তিনি নিষ্পাপ হয়ে ফিরে এলেন।’
নিষ্পাপ ব্যক্তি যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন তিনি তাঁর এই হজটাকে পরবর্তী জীবনে ধরে রাখার জন্য, যাতে করে তিনি এ অবস্থায় থাকতে পারেন। স্বেচ্ছায় যাতে কোনো অপরাধ, অন্যায়, কোনো জুলুমের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত না করেন। কারণ, হজ করার পর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অবাধ্যতার সঙ্গে যদি নিজেকে সম্পৃক্ত করে নেন, এর অর্থ হচ্ছে তিনি আসলেই জান্নাতের কাছে গিয়েও জান্নাতে পৌঁছাতে পারেননি। যেহেতু আল্লাহ সুবানাহুতায়ালা তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, কিন্তু তিনি সেই ক্ষমার ওপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারেননি। এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
চতুর্থ মৌলিক বিষয়টি হচ্ছে সালাত, যেটা রাসূল (সা.) বলেছেন, ইমানের প্রতিরক্ষা, নিয়মিত সালাতের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। দেখা যায়, অনেকেই খামখেয়ালি করে থাকেন।
পঞ্চম বিষয় হচ্ছে, অন্যের হক নষ্ট করা থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত রাখা। আমরা চেষ্টা করব এই কাজগুলো যদিও বলতে খুব সহজ, কিন্তু প্রতিটি কাজই অনেক বিশাল এবং জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইমানদার ব্যক্তি যখন হজ করবেন তাঁকে এটাই খেয়াল রাখতে হবে যে আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে ওয়াদাবদ্ধ। আমি এই স্বীকৃতি দিয়েছি যে আল্লাহ আমি হাজির হয়েছি, অপরাধের বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের স্বীকৃতি দিয়ে ক্ষমা নিয়ে এসেছি।
তাওহিদ এত ব্যাপক যে, তাওহিদের মধ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রশংসা, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত। তাই যাঁরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে বাদ দিয়ে অন্যকে সার্বভৌমত্বের জন্য নির্ধারণ করেন, তাঁরা কিন্তু তাওহিদের প্রকৃত কাজ করছেন না। এটা হাজিদের প্রকৃত কাজ হতে পারে না।