আপনার জিজ্ঞাসা
রাসূল (সা.)-এর নাম শুনলে কি আঙুল চুমু খেয়ে চোখে লাগাতে হয়?

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৮৯১তম পর্বে রাসূল (সা.)-এর নাম শোনার পর দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি একসঙ্গে চুমু খেয়ে চোখে লাগালে কোনো ফজিলত পাওয়া যায় কি না, সে সম্পর্কে ই-মেইলে জানতে চেয়েছেন সাখাওয়াত ইলাহী। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : কিছু লোককে দেখা যায়, তাঁরা আজান বা অন্য কোনো সময়ে মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম শোনার সঙ্গে সঙ্গে দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি একসঙ্গে চুমু খেয়ে তার পর চোখে লাগান। এর পক্ষে নাকি একটি হাদিস আছে। আমি জানতে চাই, এটা কতটা সহিহ বা এর ফজিলত কী।
উত্তর : প্রথম কথা হচ্ছে, সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হলো, অথচ সে আমার ওপর দরুদ পড়ল না সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত।’ এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে, রাসূল (সা.)-এর নাম যখন আসবে, তখন দরুদ পড়াটা হচ্ছে বিধান।
এখন দরুদ পড়ার বিধানকে, সুন্নাহকে বাদ দিয়ে এই সুন্নাহর জায়গায় আমাদের আবেগ কাজে লাগিয়ে শয়তান এমনভাবে বিদআত ঢুকিয়েছে যে, সেখানে আপনি ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ আর বলেন না। আপনি আঙুল একসঙ্গে করে চোখে-মুখে লাগাচ্ছেন।
বরং রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় বখিল বা কৃপণ ব্যক্তির পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি, সে হলো ওই ব্যক্তি, যার সামনে আমার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, অথচ সে দরুদ পড়ে নাই।’ তাহলে বোঝা গেল, যে লোক দরুদ না পড়ে এই কাজটি করছেন, সে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বখিল ব্যক্তি।
রাসূল (সা.)-এর নৈকট্য তো প্রশ্নই আসে না। কারণ, এটাই রাসূল (সা.)-এর নির্দেশনা। সুতরাং রাসূল (সা.)-এর নির্দেশনা লঙ্ঘন করে তিনি যে কাজটি করছেন, সেটা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি কৃপণতার কাজ। রাসূল (সা.) বলেছেন, সে হচ্ছে সবচেয়ে বড় কৃপণ। সুতরাং এটা ফজিলতের কাজ নয়।
এরপর যেটা বলছি সেটা হলো, এই মর্মে রাসূল (সা.)-এর কোনো মিথ্যা হাদিসও সাব্যস্ত হয়নি। সহিহ হাদিস তো দূরের কথা, কোনো মিথ্যা হাদিসও আসেনি। যে রেওয়াতটি উল্লেখ করা হয়ে থাকে, এটি আবু বকর (রা.) থেকে এসেছে বলা হয়ে থাকে। এটি একেবারেই জালিয়াতি বক্তব্য, মিথ্যা বক্তব্য।
যদি এ ধরনের কাজ করা হয়, এটা বলা হয়ে থাকে যে তাদের চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়। যদি চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়, তাহলে রাসূল (সা.)-এর নাম বললেই তো চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এটা আদৌ রাসূল (সা.)-এর হাদিসে সাব্যস্ত হয়নি; বরং এটি একটি মিথ্যা হাদিস। এই আমলটুকু রাসূল (সা.) করতে বলেন নাই। বরং রাসূল (সা.)-এর নাম যখন আসবে, তখন তাঁর নামের ওপর ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ অথবা ‘আল্লাহুম্মা সাল্লিউ সাল্লিমা আলাইহি’ বলা হচ্ছে সুন্নাহ।