আপনার জিজ্ঞাসা
খুনির সঙ্গে জামাতে নামাজ পড়া যাবে কি?

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
বিশেষ আপনার জিজ্ঞাসার ৪৭৮তম পর্বে খুনির সঙ্গে জামাতে নামাজ পড়া যাবে কি না, সে সম্পর্কে কুড়িগ্রাম থেকে টেলিফোনে জানতে চেয়েছেন শামিদুল্লাহ দুলু। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : আমার প্রশ্নটা হলো, কিছুদিন আগে আমাদের পাশের মহল্লার এক ভাই হজ করে এসেছেন। হজ করে আসার পর কোনো এক কারণে তিনি একজনকে খুন করেন।
এখন ওই মহল্লার লোকেরা ওই ভাইকে জামাতে নামাজ পড়তে দিচ্ছেন না। তাই উনি আমাদের মহল্লায় এসে নামাজ পড়েন এবং মসজিদে দান করেন। আমাদের মহল্লার কিছু লোক উনাকে আমাদের মসজিদে নামাজ পড়তে নিষেধ করেন। এখন উনার মসজিদে নামাজ পড়া এবং তাঁর এই দান নেওয়া যাবে কি না, ধর্মীয় আলোকে আমি তা জানতে চাইছি।
উত্তর : তাঁকে নামাজ পড়তে বাধা দেওয়ার কোনো অধিকার নেই। তিনি যদি খুন করে থাকেন, তার জন্য বিচার আছে। তার জন্য বিধান আছে। ইসলামী বিধান রয়েছে।
আবার আমাদের দেশেও এর জন্য বিধান রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁকে সালাতে বাধা দেওয়ার চেয়ে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
সালাতে বাধা দেওয়ার কারো অধিকার নেই। সালাত তো সৎকর্ম। এটা তো কোনো মন্দ কাজ নয়। সেসব বন্ধু তাঁকে সালাতে বাধা দিচ্ছেন, তাঁরা কিন্তু মূলত হারাম কাজ করছেন। কোরআনের মধ্যে একদম স্পষ্ট করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন যে, ‘এটি নিষিদ্ধ বিষয়, কারণ তাঁর চেয়ে বড় জালেম আর কেউ নেই।’
এ ক্ষেত্রে উনি যে খুন করেছেন, এই খুনের চেয়েও বড় জুলুম হচ্ছে তাঁকে সালাতের মধ্যে বাধা দেওয়া। এটি ভয়ংকর অপরাধ। আপনারা কী জন্য তাঁকে সালাতে বাধা দিচ্ছেন? তাঁর খুনের জন্য তাঁকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে, সেটা দুনিয়াতেও পেতে পারে বা আখিরাতেও পেতে পারে, শাস্তি পাবেই। কিন্তু তাঁকে সালাতে বাধা দেওয়ার অধিকার কারো নেই। এই কাজটি যাঁরা করেছেন, তাঁরা না জেনেই আন্দাজের ওপর করছেন।
এ ছাড়া তাঁর দানও নেওয়া জায়েজ। কারণ, কোনো ব্যক্তি যদি কাউকে হত্যা করে, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে না। সে অপরাধী হবে। আর দান তো খারাপ কাজ নয়। সুতরাং তাঁর দানও আপনারা গ্রহণ করতে পারেন।
তবে এ কথার অর্থ এই নয় যে, খুনের এত বড় অপরাধকে ক্ষুদ্র করে দেখা হচ্ছে। একে ক্ষুদ্র করে দেখা হচ্ছে না; বরং হত্যা যে করেছেন তার জন্য শাস্তি অথবা তাঁকে আইনের মুখোমুখি করা, এটাও মুসলমানদের দায়িত্বের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
মূল বিয়ষটি হলো, আমাদের যথা বিষয়কে যথাস্থানে রাখতে হবে।