আপনার জিজ্ঞাসা
রাগ করা কি হারাম?

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৮৯৩তম পর্বে ই-মেইলে রাগ হলে কী করণীয়, সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দর্শক। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : রাগ হলে কী করণীয়? রাগ থেকে কীভাবে মুক্ত থাকা যাবে?
উত্তর : রাগ ইসলামে হারাম কাজ। রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন, ‘রাগ করো না তোমরা, রাগ করো না, রাগ করো না।’ এভাবে বারবার নিষেধ করেছেন। যদি কারো রাগ এসে যায়, তাহলে ইসলাম এই রাগকে যেভাবে হোক প্রশমন করার জন্য, রাগ থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য, প্রথমে যে বিধান দেওয়া আছে সেটা হচ্ছে, শয়তানের কারণেই মূলত এই রাগের উদ্ভব ঘটে। শয়তান যদি কোনোভাবেও তৈরি করে থাকে অথবা কোনো বিষয়ে তাঁকে প্রলুব্ধ করে, তখন সেখান থেকে মূলত রাগের উদ্ভব হয়। তাই নবী (সা.) যেটি পছ্ন্দ করেছেন, সেটি হচ্ছে, ‘আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করা।’ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে ইশতেহাদা করা। এটা হচ্ছে রাগের প্রথম ধাপ।
আউযুবিল্লাহিমিনাশ শায়তনির রাজিম পড়ার পর যদি দেখা যায় যে, রাগ কমে গেছে, তাহলে ভালো। তাহলে তিনি রাগ কিছুটা প্রশমন করতে পারলেন। রাগ থেকে মুক্ত হতে পারলেন।
আর যদি সেখানেও না হয়ে থাকে, তাহলে এটা বলা হয়েছে যে, তিনি অজু করতে পারেন। অজু করতে পারলেও রাগ কিছুটা প্রশমিত হতে পারে। রাগ কমতে পারে। যদি দেখেন তাতেও রাগ কমছে না, তাহলে সে সময় যে অবস্থায় থাকবেন তা থেকে অন্য অবস্থায় চলে যাওয়া। যেমন : দাঁড়িয়ে থাকলে বসে পড়া। এই অবস্থার পরিবর্তন হলে মানুষের মনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে রাগ আসলে যে অবস্থা তৈরি হয়ে থাকে, সেখান থেকে কিছুটা হালকা হতে পারে।
এটা মূলত নির্ভর করছে ব্যক্তির অবস্থার ওপর। অনেকের বিবেক-বিবেচনাও হারিয়ে যায়। যদি এটা প্রকট হয় তাহলে তিনি সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করবেন যে কারণে রাগ হচ্ছে, সেখান থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া। তাহলে রাগটা ঠান্ডা হতে পারে। এটা হলো রাগ থেকে বাঁচার জন্য ইসলামের বিধান।
রাসুল (সা.) রাগ থেকে আল্লাহর বান্দাকে বিরত থাকতে বলেছেন। কারণ, রাগ এমন একটা অবস্থা যে, এর মাধ্যমে তাঁর যত হাসানাত বা ভালো কাজ আছে, সবগুলোকে নষ্ট করে দিতে পারে, ভস্মীভূত করে দিতে পারে। কারণ রাগের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। তাই রাগ থেকে বিরত রাখার জন্য যত ধরনের চেষ্টা রয়েছে, সবগুলো করতে বলা হয়েছে যাতে করে রাগ থেকে আমরা নিজেরা বিরত থাকতে পারি।
রাগ মূলত মানুষের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। কারণ যখন কারো রাগ এসে যায়, তখন তাঁর কর্মকাণ্ড এমন হয় যে, পরবর্তী সময়ে নিজেকে লজ্জিত হওয়া ছাড়া তাঁর আর কোনো উপায় থাকে না। তখন সে ভাবে, আমার মতো লোক এই কাজ করেছি! নিজেও উপলব্ধি করে পারে না আমি এ কাজটি করেছি। তাই এ কাজ থেকে আমাদের দূরে সরে আসতে হবে।