পতনেও মূলধন বেড়েছে সাত হাজার কোটি টাকা
বিদায়ী সপ্তাহে (রোববার থেকে বৃহস্পতিবার) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। আলোচিত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। তবে পুঁজিবাজারে মূলধন বেড়েছে সাত হাজার কোটি টাকা। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর পতনের চেয়ে উত্থান বেশি হয়েছে। মোট লেনদেনের ৩৪ শতাংশই ১০টি কোম্পানির দখলে। শীর্ষ ১০ কোম্পানির লেনদেনে পাঁচটিই ‘বি’ ক্যাটাগরি বা দুর্বল কোম্পানির শেয়ার।
ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, গেল সপ্তাহে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৫০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। বাকি ৫০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার টপটেনে অবস্থান করেছে। এদের মধ্যে পাঁচটির দর বাড়লেও কমেছে পাঁচটির শেয়ার দর। গেল সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৩৪ দশমিক ২৬ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। এই দশ কোম্পানি লেনদেন করেছে ৬৯০ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ‘এ’ ক্যাটাগরির ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের লেনদেন করেছে ১০২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বা ৫ দশমিক শূন্য আট শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর কমেছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
এছাড়া বিডি থাইয়ের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১০০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, সী পার্ল বিচের (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৯২ লাখ ১৭ লাখ টাকা, অলিম্পিক এক্সেসরিজের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৮৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, খুলনা প্রিন্টিংয়ের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৭৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, সেন্ট্রাল ফার্মার (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৫৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা, ইন্ট্রাকোর (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৫৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, রুপালী লাইফের (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৪৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স ফান্ডের (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৩৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং প্যাসিফিক ডেনিমসের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৩৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র মতে, গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ৯২৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৩১ দশমিক ১৩ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫০৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৫৮৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৮৬টির, দর কমেছে ৮৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২১১টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ২৫টি কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহে সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৪৬ দশমিক ৫০ পয়েন্টে। ডিএসই৩০ সূচক দশমিক ৭৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৯৩ দশমিক ৮৩ পয়েন্টে। এ ছাড়া শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস এক দশমিক ৩১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৬৪ দশমিক ১৩ পয়েন্টে।
গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপর ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর শেয়ারবাজার মূলধন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর শেয়ারবাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৮০ হাজার ৮৪৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকায়। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭০৬ কোটি ৫ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৭ হাজার ১৪৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বা দশমিক ৯২ পয়েন্ট।
এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৩ দশমিক ১২ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১৩ দশমিক ১৬ পয়েন্টে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবারের ডিএসইর পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।