মানি লন্ডারিংকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না: শেখ শামসুদ্দিন আহমদ
মানি লন্ডারিংকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না, কেননা এর কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজের সাধারণ মানুষ মন্তব্যে করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমদ বলেন, প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে আপানার কাজ হচ্ছে মানি লন্ডারিংয়ে ছাড় না দেয়া। যদি ছাড় দেন তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার ফলাফল হবে আর্থিক সিস্টেমের ক্ষতি।
আজ রোববার (২৬ মে) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চট্টগ্রামস্থ প্রধান কার্যালয়ে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ (এএমএল এন্ড সিএফটি) বিষয়ক দিনব্যাপী প্রশিক্ষন কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালাটি আয়োজন করে বিএসইসি ও সিএসই। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এক্সচেঞ্জের সংশ্লিষ্ট সকল স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলাররা উপস্থিত ছিলেন।
শেখ শামসুদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা যে প্রতিষ্ঠানের সাথেই সংযুক্ত থাকি না কেন ,মনে রাখতে হবে ক্যামেলকো বা বামেলকোর কাজগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আমাদের সরকারের মৌলিক নীতির মধ্যে আছে, বাংলাদেশ মানিলান্ডারিং পছন্দ করে না এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। জিরো টলারেন্স ও টেরোরিস্ট ফিনান্সিং এই দুটো বিষয়কে যেহেতু সরকার আইন করে নিষিদ্ধ করেছে তাই আমাদেরও প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, আমরা সঠিকভাবে সব সময় সচেষ্ট থাকবো কোনোভাবেই যেন আমাদের কারনে আমাদের প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের মানিলান্ডারিং এবং সন্ত্রাসী অর্থায়নের কার্যক্রম সংঘটিত না হয়। এর জন্য আমরা কিভাবে ভূমিকা রাখবো সেটি হলো আজকের প্রতিপাদ্য বিষয়। এখানে অনেক বিষয়ের মধ্যে দুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মনিটরিং এবং এনফোর্সমেন্ট। যদি এই দুটি বিষয়কে আমরা যথাযথভাবে পালন করতে পারি, তবে একজন ক্যামেলকো বা বামেলকো হিসেবে সঠিক সিধান্ত নিতে পারব। খেয়াল রাখতে হবে, যেকোনো বিষয় শুরুতেই সূক্ষ্ম বিবেচনায় নিয়ে দেখতে হবে। প্রতিটি বিষয় এমনভাবে দেখতে হবে যেন একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর মনে না হয়, পূর্বেই আরও ভালোভাবে দেখলে অমন হত না। তাই আমাদেরকে কিছুটা সন্ধিৎসু হতে হবে, সন্ধিৎসু এই অর্থে যেন আপাত দৃষ্টিতে যা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে কিন্তু সূক্ষ্ম বিবেচনায় তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া অনুসন্ধান করেই থেমে থাকা যাবে না , এর প্রয়োজনীয় প্রতিকার মানে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মানি লন্ডারিংকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না, কেননা এর কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজের সাধারণ মানুষ। তাই আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে আপানার কাজ হচ্ছে ছাড় না দেয়া । যদি ছাড় দেন তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার ফলাফল হবে আর্থিক সিস্টেমের ক্ষতি। অপরদিকে, আপনার নেয়া একটি পদক্ষেপ হতে পারে অন্যদের জন্য উৎসাহের উদাহরণ। তবে আপনাদেরকে আরেকটি বিষয়েও যত্নবান হতে হবে তা হলো- রিপোটিং লেখা। রিপোটিং লেখাও গুরুত্বপূর্ণ কেননা এর উপরেও নির্ভর করে ব্যবস্থা গ্রহণ। প্রয়োজন হলে এই বিষয়ে সঠিক এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষনসমূহ গ্রহণ করতে হবে। আপনাদের সূক্ষ মনিটরিং, স্বচ্ছ রিপোটিং এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কমিশনের এক্সকিউিটভি ডিরেক্টর মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মানি লন্ডারিং ও টেররিস্ট ফিনান্সিং যে কোন দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় টেনে আনে । মানি লন্ডারিং এমন একটি পদ্ধতি যা অসৎ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অবৈধ অর্থ উপার্জনের উপায় সৃষ্টিতে মূল ভূমিকা পালন করে । পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও পুঁজিবাজারের উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে সর্বদা সচেষ্ট এবং যে সকল ক্যাপিটাল মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিস রিপোটিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন’ ২০১২ ও সন্ত্রাস বিরোধী আইন’ ২০১৩ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে , তাদের রেজিস্ট্রেশন প্রদান ও তাদের কার্যক্রম তদারকি করে আসছে । এই দুই আইন অনুযায়ী রিপোটিং প্রতিষ্ঠানের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন, তদারকিকরণও বিএসইসির উপর ন্যস্ত করা হয়েছে । এ প্রেক্ষিতে বিএসইসি গত ২০১৪ সালে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়নে প্রতিরোধ বিষয়ক এএমএল সিএফটি উইং প্রতিষ্ঠা করেছে এবং আমরা সে অনুযায়ী নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মশালা, সেমিনার, ওয়ার্ক শপ ইতাদি আয়োজন করছি । আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে আমরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে এই আইনগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যবহার করতে পারবো।
মানি লন্ডারিং ও টেররিস্ট ফিনান্সিং হচ্ছে জাতীয় স্বার্থের সাথে জড়িত একটি বিষয় জানিয়ে সিএসইর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এম সাইফুর রাহমান মজুমদার বলেন, এর কারন হচ্ছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যে লেনদেনগুলো হয় তার একটি নির্দিষ্ট মানদন্ড থাকে, আর কোনো দেশের আইনগত কাঠামো কত স্বচ্ছ তার উপর ঐ দেশের কান্ট্রি গ্রেডিং নির্ভর করে। এক্ষেত্রে এটা ও দেখা হয় যে সংশ্লিষ্টরা কতখানি নিয়ম কানুন পরিপালন করে এবং সঠিকভাবে করে কিনা। হতে পারে আমরা আনেক ধরণের সংকটের মধ্যে থাকতে পারি , কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হবে সব সময় রুটিন কার্যক্রমগুলো পালন করা, একসাথে এটাও বিবেচনা করতে হবে যে সামান্য অনিয়ম ও বড় ক্ষতির কারন হতে পারে। রিপোটিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই আইন পরিপালনকে বারডেন হিসেবে না দেখে নিজেকে সব সময় প্রস্তুত রাখতে হবে এবং নিয়মিত ট্রেনিং এর মাধ্যমে নিজেকে উন্নত করতে হবে। রেগুলেটরি কাঠামোর মধ্যে থেকে এই ব্যাপারগুলোকে এড়িয়ে না গিয়ে আমাদের সম্মুখীন হতে হবে।
এডিশনাল ডিরেক্টর মোহাম্মাদ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিএসইসির কাজ হচ্ছে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষা করা এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়ন এবং এই সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা । আজকের আলোচ্য আইন দুটি সম্পর্কে ভালোভাবে শুনবো, জানবো এবং বাস্তব ক্ষেত্রে এর সঠিক প্রয়োগ করতে পারি তবেই আমাদের এই কর্মশালা সার্থক হবে। মনে রাখতে হবে যে, আইন দুটির ভুল ব্যবহার বা অজ্ঞতা দেশের অর্থনীতিকে বাঁধাগ্রস্ত করবে এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে। তাই বিএসইসি মানি লন্ডারিং ও টেররিস্ট ফিনান্সিং এর প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে।