শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে স্পেনের স্বপ্ন ভেঙে ফাইনালে ইতালি
চিয়েসার গোলে জয়ের পথেই হাঁটছিল ইতালি। কিন্তু কে জানতো ইতালির জন্য অপেক্ষা করছে আরো কঠিন কিছু? জয়ের পথে থাকা ইতালির রক্ষণ ভেঙে হঠাৎ ম্যাচের শেষ দিকে গোল করে বসেন স্প্যানিশ তারকা আলভারো মোরাতা। তাতেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। ম্যাচের নির্ধারিত সময় কাটে সমতায়। অতিরিক্ত সময়ও কাটে সমতায়। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় টাইব্রেকারে। ভাগ্য পরীক্ষায় অবশ্য কোনো অঘটন ঘটেনি। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটিতে পেনাল্টি শুটআউটে স্পেনের স্বপ্ন ভেঙে ইউরোর ফাইনালে উঠেছে ইতালি।
লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১টায় অনুষ্ঠিত ইউরোর প্রথম সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে স্পেনের বিরুদ্ধে ৪-২ গোলে জিতেছে ইতালি। ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে দুদলের স্কোর ছিল ১-১। ইতালির হয়ে গোল করেছেন চিয়েসা। স্পেনের হয়ে জালের দেখা পেয়েছেন মোরাতা। ইউরোর ফাইনালে ইতালির প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক বা ইংল্যান্ড। আগামী ১১জুলাই দিবাগত রাত ১টায় হবে টুর্নামেন্টটির ফাইনাল।
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ফুটবলে তেমন সাফল্য নেই ইতালির। ২০১২ সালের ইউরোর ফাইনালে উঠেও ট্রফি ছোঁয়া হয়নি। এরপর ফুটবলে অন্ধকার দেখা ইতালি ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারেনি। সেই ইতালিই এখন দেখাচ্ছে অন্য রূপ। এবারের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে যেন সব আক্ষেপ মেটাচ্ছে মানচিনির শিষ্যরা। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে ধারাবাহিকতা ধরা রাখা ইতালি স্পেনকে হারিয়ে উঠে গেছে ইউরোর ফাইনালে।
যদিও মূল ম্যাচে সবদিক থেকে এগিয়ে ছিল স্পেন। ম্যাচের বেশির ভাগ সময় বল দখলে রাখে স্পেন। ৭১ ভাগ সময় বল দখলে রাখা স্প্যানিশরা আক্রমণেও ছিল এগিয়ে। মোট ১৬ বার প্রতিপক্ষ শিবিরে আক্রমণ করে, যার মধ্যে পাঁচটিই ছিল অনটার্গেট শট। অন্যদিকে সাতবার শট নেওয়া ইতালির অনটার্গেট শট ছিল চারটি।
ম্যাচটিতে ১৫ মিনিটের মাথায় প্রথম সুযোগ পায় স্পেন। ফেরান তোরেস ইতালির জালে বল জড়ানোর চেষ্টা করেন। তবে টার্গেটে ছিল না তাঁর শট। এরপর ২১ মিনিটে ভালো সুযোগ পায় ইতালি। প্রতিপক্ষের ডি বক্সের কাছ থেকে এগিয়ে যাওয়ার একদম কাছে থেকেও তালগোল পাকিয়ে যায় ইতালির।
২৫ মিনিটের মাথায় আরেক দফায় ব্যর্থ হয় স্পেন। দানি ওলমোর শট ফিরিয়ে দেন ইতালির গোলরক্ষক দোনারুমা। ৩৩ মিনিটের মাথায় ইতালির পোস্ট লক্ষ্য করে শট নেন ওলমো। কিন্তু বল ক্রসবারের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যায়। পাল্টা আক্রমণে ৩৬ মিনিটে স্পেনের ডি বক্সের ভেতরে বল নিয়েও ব্যর্থ হয় ইতালি।
৩৯ মিনিটে আরেকটি দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করে স্পেন। ডান দিক থেকে জর্দি আলভার পাস পেয়ে প্রতিপক্ষের ডি বক্সের সামনে থেকে জোরে শট নেন স্প্যানিশ তারকা মিকেল। কিন্তু তাঁর লক্ষ্যভ্রষ্ট শট যায় পোস্টের ওপর দিয়ে। এরপর আর বিরতির আগে জালের দেখা পায়নি কোনো দলই। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য থেকেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে দুদলকে।
বিরতি থেকে ফিরে আক্রমণে আগের থেকে কিছুটা ধারাল দেখা যায় ইতালিকে। ৪৯ মিনিটের মাথায় ইমমোবিল স্পেনের রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করেন। তবে তাঁর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। বল চলে যায় মাঠের বাইরে। এর মধ্যে ৫১ মিনিটের মাথায় ইমমোবিলকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন সার্জিও। দুই মিনিট বাদে আরেকটি সুযোগ পায় ইতালি। ডি বক্সের সামনে থেকে শট নেন চিয়েসা। কিন্তু স্প্যানিশ গোলরক্ষকের কারণে হতাশ হতে হয় ইতালিকে।
বিরতির পর গুছিয়ে নেওয়া ইতালি অবশেষে ৬০ মিনিটে পেয়ে যায় সাফল্য। ডি বক্সের বাইরে থেকে দারুণ শটে ইতালিকে এগিয়ে নেন চিয়েসা।
পিছিয়ে পড়ের কিছুক্ষণের মধ্যে পরপর দুটি সুযোগ হাতছাড়া করে স্পেন। প্রথমে ৬৩ মিনিটে একবার পোস্টের কাছে লক্ষভ্রষ্ট হেডে সুযোগ নষ্ট হয়। দুই মিনিট বাদে আরেকবার ব্যর্থ হয় স্প্যানিশরা। পাল্টা আক্রমণে ৬৭ মিনিটে চিয়েসে ফের আক্রমণে ওঠেন। কিন্তু ওই যাত্রায় আর জালের দেখা পাননি।
শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ৮১ মিনিটে গোল পেয়ে যায় স্পেন। বদলি হয়ে মাঠে নেমেই দলকে সমতায় ফেরান মোরাতা। ওলমোর সঙ্গে ওয়ান-টু পাসে জায়গা খুঁজে বের করেন মোরাতা, তারপর বাঁ পায়ের নিচু শটে স্কোরলাইন ১-১ করেন মোরাতা। এরপর শেষের দিকে গোল না আসলে নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয় সমতায়।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথম ১৫ মিনিটেও গোলের দেখা পায়নি দুদল। পরের ১৫ মিনিটে ইতালি পেলেও সেটা হয়ে যায় অফসাইড। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ফল মেলে টাইব্রেকারে।