২৭৬ বর্গমাইলের দেশের সঙ্গে লড়বে আর্জেন্টিনা

Looks like you've blocked notifications!
আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দল। ছবি : আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা এখন স্বর্গের সপ্তম দুয়ারে আছে। বিশ্বকাপ জয়, জার্সিতে তিন তারকা, মানুষের ভালোবাসায় মেসি-মারিয়া-ডি পলদের চাওয়ার চেয়ে পাওয়ার পাল্লা ভীষণ ভারী। দু’হাত ভরে প্রতিদান দিচ্ছেন আকাশী-নীলরাও। যাদের জন্য বিশ্বকাপ জিতেছেন, সেই দেশের মানুষের সঙ্গে সোনালি আভা ভাগাভাগি করতে দেশে আয়োজন করেছেন দুটো প্রীতি ম্যাচের। রাজধানী বুইয়েন্স আইরেসে একটিতে পানামার বিপক্ষে জিতেছেন, এবার সান্তিয়াগো দেল এস্তেরো রাজ্যে আরেকটায় জেতার অপেক্ষা।

তবে, এই দুটি ম্যাচে ফলাফল একেবারেই গৌণ। শুধু আর্জেন্টিনার জন্য নয়, আগামীকাল ২৯ মার্চ (বুধবার) বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে পাঁচটায় যখন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মাঠে নামবে প্রতিপক্ষ ‘কুরাসাও’, তাদের কাছেও নিশ্চয়ই হার-জিত ছাপিয়ে মেসিদের সঙ্গে খেলতে পারাটাই আনন্দের। কুরাসাও নামটাই বোধহয় শোনা হতো না যদি আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলা না পড়তো দলটির।

দক্ষিণ ক্যারিবিয়ান সাগর ও ডাচ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দ্বীপদেশ কুরাসাওয়ের আয়তন মাত্র ২৭৬ বর্গমাইল। জনসংখ্যা ১ লাখ ৫২ হাজার। মজার ব্যাপার হচ্ছে, শুধু আর্জেন্টিনা-পানামা ম্যাচের টিকেট পেতে আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা পড়েছিল ১ লাখ ৩১ হাজার। কুরাসাওর ফুটবল ঐতিহ্য খুব সমৃদ্ধ না হলেও বেশ পুরোনো। টেরিটরি অব কুরাসাও জাতীয় ফুটবল দল নামে ১৯২৪ সালে সবুজ আয়তক্ষেত্রে প্রথম বিচরণ করে তারা। আধুনিক ফুটবলে পেশাদারভাবে প্রবেশ করে ২০১১ সালে। সে বছরই ফিফার পূর্ণ সদস্যপদ পায় কুরাসাও।

কুরাসাওয়ের সবচেয়ে বড় সাফল্য ২০১৭ সালে ক্যারিবিয়ান কাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়া। এছাড়া ২০১৯ সালে কনকাকাফ নেশন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল কুরাসাও। ভাবতে পারেন, মেসিরা কেনো এদের ডেকে এনে আপ্যায়ন করলো! কাতার বিশ্বকাপে যেখানে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন,  সেখানে খেলার যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেনি কুরাসাও। তবে বাছাইপর্ব একদম খারাপ যায়নি তাদের। নিজ অঞ্চলে ৬ ম্যাচ খেলে ৩ জয়ের বিপরীতে ড্র করেছে ২টি, হার মাত্র ১ ম্যাচে। সবকিছুর পুরস্কারও পেয়েছে। আর্জেন্টিনার নজরে আসার চেয়েও বড় বিষয় ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে তাদের বর্তমান অবস্থান ৮৬! অবশ্য এটিই তাদের সর্বোচ্চ নয়।

এর আগে ২০১৭ সালে ক্যারিবিয়ান কাপ জিতে নিজেদের ইতিহাসের সেরা পর্যায়ে উঠে আসে তারা। সে সময় তাদের অবস্থান ছিল ৬৮তম। কুরাসাও দলটি নিজেরাও জানে এতটা আলোচনায় এত সহজে আসতে পারতো না তারা। আর্জেন্টিনার বর্তমান দলটাই এমন। বদলে দিয়েছে বিশ্ব ফুটবলের চিত্রপট। এতখানি আনন্দ নিয়ে কে কবে খেলেছিল ফুটবল, কে কবে দেখেছিল এতটা মুগ্ধতা নিয়ে তা ভাবনার বিষয়।

বিশ্বসেরা হওয়া পর যাদের প্রীতি ম্যাচ ঘিরে উন্মাদনা থাকে বিশ্বকাপের মতোই, যাদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাচ্ছে বলে ফুটবল মানচিত্রে আলোচনায় উঠে আসে অখ্যাত এক দল, তখন আর্জেন্টাইন কবি ভ্যালেরিয়া সোয়েদাদ লোপেজের ‘জীবিত’ কবিতার শুরুর মতো বলতে ইচ্ছে হয়– ‘আমি জানি আমি বেঁচে আছি কারণ, তুমি আমাকে জীবন দিয়েছ!’ সত্যিই নতুন করে ফুটবলটাকে এমন উন্মাদনায় জীবন কী দিতে পেরেছিল কেউ?